বেণি করে চুল বাধায় প্রধান শিক্ষিকা ছাত্রীদের মারধর করেন

0

চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকার আয়াকুব আলী দোবাস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কাবাডি খেলার জন্য চুলে ফ্রেঞ্চ বেণি করে কাবাডি খেলার অভিযোগে প্রধান শিক্ষিকা মেয়েদের মারধর ও বকাঝকা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ জানিয়ে বিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন। এ ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। কয়েকদিন আগে এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর গতকাল জেলা প্রশাসক (ডিসি) তিন সদস্যের একটি কমিটি করেন।

মেয়েদের সাফজয়ের পর কয়েকদিন আনন্দে ভাসছে গোটা দেশ। এমন সময়ে মেয়েদের চুল বাঁধার ঘটনা অনেকের মনে দাগ কেটেছে। তাই ফেসবুকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছেন অনেকে।

বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষিকা জাহিদা জানান, অপমান ও ক্ষোভের কারণে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘স্কুলের মেয়েরা এক মাস খেলা শেখার পর মাঠে যাওয়ার আগের দিন ফ্রেঞ্চ ব্রেডের সঙ্গে ছবি তোলা হয়। কিন্তু এভাবে খেলতে যাওয়ায় আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেয়েদের চুল ধরে মারধর করে। প্রতিবাদে আমার চুল ফেলে দিয়েছি। এটা কি খুব খারাপ দেখায়?’

এতে তিনি লিখেছেন, প্রধান শিক্ষিকাদের অসহযোগিতার কারণে এক মাস প্রশিক্ষণ নিয়েও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনি মেয়েরা।

এ প্রসঙ্গে জাহিদা গতকাল বলেন, ‘৪৯তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে স্কুলের ১২ ছাত্রীকে নিয়ে একটি কাবাডি দল গঠন করেন তিনি। ৭ সেপ্টেম্বর, তিনি ফ্রেঞ্চ বেণি করে মেয়েদের সঙ্গে একটি ছবি তোলেন. তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রীদের বকাঝকা করেন এবং কয়েকজনের চুল ধরে টান দেন। কেন এমন করলেন- তিনি। এতে অপমানিত হয়ে অনেক মেয়েই কাঁদে। আমি দেখলাম এবং সেখানে গিয়ে তাকে থামালাম। বলে, আমি ওদের এভাবে বুনতে বলেছি। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, তিনি এভাবে বুনতে পারেন না।

এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মতো তিনিও অপমানিত বোধ করেন। ঘটনার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার সাত দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি চুল কামিয়ে নেন। বৃহস্পতিবার তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে নিজের ও শিক্ষার্থীদের ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট দেন।

জাহিদা জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনি খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন। তবে স্কুলে মডেল টেস্ট থাকায় কাবাডি দল আসতে দেরি হওয়ায় খেলায় অংশ নিতে পারেনি। তিনি অভিযোগ করেন, খেলার দিন মাঠে যাওয়ার আগে প্রধান শিক্ষিকা নানা ছুটো তাদের দেরি করেন। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মাঠে ঢুকতে দেননি সমন্বয়কারী।

ঘটনার পর এতদিন ফেসবুকে প্রতিবাদের কারণ জানতে চাইলে জাহিদা বলেন, ঘটনার পরদিন তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এই বিলম্বের কারণ।

জাহিদা আরও বলেন, প্রধান শিক্ষিকা মেয়েদের স্বাধীনভাবে স্কুলে কাজ করতে দেন না। খেলার জন্য মেয়েদের নিয়ে দল গড়তে চাইলে তিনি বাধা দেন। এমনকি এখানে স্কাউটিং অনুমোদিত নয়।

তবে প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি ছাত্রীদের চুল বাঁধার জন্য মারধর করিনি বা বকাঝকা করিনি।’ তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান জানান, শুক্রবার থেকে এ ঘটনায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, শিগগিরই তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় যারাই দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল রাতে জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জাহিদার বাসায় দেখা করতে যান।

জাহিদা ২০১১ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ে কর্মরত। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দুবাশ বলেন, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগে ওই শিক্ষক পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় তা গৃহীত হয়। ঘটনার এত দিন পর কেন তিনি এসব অভিযোগ আনছেন? অন্ন কেউ তার চুল  ফেলেননি; তিনিই ফেলেছেন।

জহিরুল বলেন, কাবাডি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাওয়ার পর আমরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার পরপরই তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, আয়াকুব আলী দোবাস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। এখানে ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *