বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ।নাঙ্গলকোটে সংঘর্ষ, রণক্ষেত্র, পুলিশ ও আহত অর্ধশতাধিক।সাভার ও নারায়ণগঞ্জে লাঠিপেটা
বিএনপির চলমান বিক্ষোভ সমাবেশকে ঘিরে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ও বুধবার কুমিল্লা, বগুড়া, নেত্রকোনা, নারায়ণগঞ্জ, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষে দলটির দেড় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদিকে, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে ওসিসহ উভয় দলের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ম্যুরাল, বিএনপির কার্যালয় ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট ও লালমাই) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ক্ষমতাসীন দলের বাধার মুখে পড়েছেন। নেত্রকোনার মদনে সংঘর্ষে ওসিসহ ১৭ জন এবং বগুড়ার নন্দীগ্রামে তিনজন আহত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। ঢাকার সাভারে যুবদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ১৪৪ ধারার কারণে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিএনপি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘোষণা দেওয়ার পরও নেতাকর্মীরা মাঠে নামেনি। তবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, ঝালকাঠির কাঁথালিয়া ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে পুলিশি পাহারায় কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি এবং ভোলায় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা নিহতের প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। এসব কর্মসূচিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের মধ্যে বাধা, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। এতে আহত হচ্ছেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। প্রশাসন অনেক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করছে। এসব হামলায় পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তার করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বিএনপির দাবি, এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক স্থানে হামলা হয়েছে। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক স্থানে তাদের সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত হয় হাজার হাজার। হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লা: কুমিল্লা-১০ আসনে গতকাল সমাবেশে এসে বাধার মুখে পড়েছেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নাঙ্গলকোট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষ হয়। এতে থানার ওসিসহ ছয় পুলিশ সদস্য ও দুই দলের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। অর্থমন্ত্রীর ম্যুরাল ভাংচুর করেছে বিএনপি কর্মীরা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল বিএনপির কার্যালয় ও দোকানে হামলা চালায়। এছাড়া বিকেলে সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজীতে উভয় পক্ষ সমাবেশ ডাকলে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।
কুমিল্লা ও আশপাশের থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলে অসুস্থ হয়ে নাঙ্গলকোট আরিফুর রহমান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৭ শিক্ষার্থীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আতঙ্কে উপজেলা সদরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা সদরে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা; অন্যদিকে অবস্থান নিয়ে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। উভয় পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে পাথর ও ইটের টুকরো নিক্ষেপ করে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজির আহমেদ বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাইলেও ক্ষমতাসীন দল পুলিশের সহায়তায় বিনা উসকানিতে হামলা চালায়। তারা বিএনপির কার্যালয় ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। তবে নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সাদেক হোসেন ভূঁইয়া জানান, বিএনপি-ছাত্রদলের কর্মীরা লোটাস চত্বরে অর্থমন্ত্রীর ম্যুরাল ও তার পাশের নৌকা ভাঙচুর করেছে। কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে। প্রতিরোধে আমাদের ১২ জন আহত হয়।
সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ জানান, একই এলাকায় দুই পক্ষ সমাবেশের ডাক দেওয়ায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বিকেলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ সুপার বলেন, নাঙ্গলকোটে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে বিএনপি কর্মীরা। তাদের হামলায় ওসি আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় থানায় পৃথক মামলা হবে।
বগুড়া: বগুড়ার নন্দীগ্রামে গতকাল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। এ সময় ৩-৪টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। নন্দীগ্রাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।