বঙ্গোপসাগরে সাতটি ট্রলার ডুবিতে ২০২ জেলে নিখোঁজ, তিনজনের মৃত্যু

0

এ বছর সাগরে মাছ ধরায় সরকারিভাবে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে লাভবান হতে পারেননি জেলেরা। নিম্নচাপের কারণে তিনি ফিরে আসেন এবং উপকূলে ১৫ দিন অবস্থান করেন। আবহাওয়ার উন্নতি দেখে বুধবার ট্রলারগুলো বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে। জেলেপাড়ায় উৎসব নেমে আসে। কিন্তু বৃহস্পতিবার হঠাৎ বৈরী আবহাওয়া দেখা দিলে বিপুল সংখ্যক জেলেসহ অসংখ্য ট্রলার উপকূলে ফিরে আসে। বঙ্গোপসাগরে পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও নোয়াখালীর অন্তত সাতটি ট্রলার ডুবে গেছে। এ পর্যন্ত তিনজন বন্দী মারা গেছে এবং অন্তত ২০২ জন বন্দী নিখোঁজ রয়েছে। ১৩টি ট্রলারের সঙ্গে মালিকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। স্বজনদের না পেয়ে হাহাকারে জেলেপাড়ার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এখন উৎসবের পরিবর্তে কান্নার রোল।

তবে পটুয়াখালী নিজামপুর কোস্টগার্ড লেফটেন্যান্ট শফিউল কিঞ্জর গণমাধ্যমকে জানান, শনিবার পর্যন্ত মোট ১৬টি ট্রলার নিখোঁজ হওয়ার খবর তারা পেয়েছেন। ট্রলার ডুবির ঘটনায় নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে তিন জেলে নিহতের লাশ এবং অন্যান্য এলাকা থেকে ৩৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ জেলের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে উপজেলার পাঁচটি ফিশিং ট্রলারসহ ৭০ জেলে। এমভি মায়ের দোয়া, এমভি আবদুল্লাহ-১, এমভি আবদুল্লাহ-২, এমভি ভাইবোন এবং এমভি জেদনি বৃহস্পতিবার রাতে নিখোঁজ হন। শনিবার বিকেলে এমভি আব্দুল্লাহ-২ এর সন্ধান পাওয়া গেলেও জেলেসহ অন্য ট্রলারগুলোর হদিস পাওয়া যায়নি। চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে এসব জেলে পরিবার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেছা খানম জানান, জেলে ও ট্রলারের খোঁজ চলছে।

শুক্রবার বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া এফবি আমজাদ ট্রলার থেকে ১৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে চলন বয়া এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। এফবি সাগরকন্যা ট্রলারের সহায়তায় গতকাল বিকেলে তারা পটুয়াখালীর আলীপুর মাছ ধরা বন্দরে পৌঁছায়।

তবে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবে যাওয়া পাঁচটি ট্রলারের মধ্যে একটির সন্ধান পাওয়া গেছে এবং ১৩ জেলে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটা-আলিপুর মৎস্য মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, শুক্রবার ছয়টি ট্রলার ডুবে ৩১ জেলে নিখোঁজ হয়েছে। তাদের মধ্যে পাওয়া গেছে ইসহাক মাঝি (৪৫)। বাড়ি না ফেরায় নিখোঁজদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের কাছে বঙ্গোপসাগরের ধামারচর এলাকায় নিখোঁজ জেলে বেলাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে দামারচর এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। বেলাল ভোলার মনপুরা উপজেলার কান্দিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা। শুক্রবার একই ট্রলারের দুই জেলে মাইন উদ্দিন ও রাফুল ইসলামের মরদেহসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। হাতিয়া থানার ওসি আমির হোসেন জানান, লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

চরফ্যাসন দক্ষিণ উপকূলে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ১১৪ জেলেসহ ৯টি ট্রলার নিখোঁজ হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় জেলেদের প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন পরিবারের সদস্যরা।

মাইনুদ্দিন মৎস্যঘাট আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মাকসুদুর রহমান জানান, চারদিনে জেলেরা বেশ কয়েকটি ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে ইলিশ ধরতে গেছে। ৯টি ট্রলার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। এসব ট্রলারে বন্দি রয়েছে ১১৪ জন। তাদের ভাগ্য অনিশ্চিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *