ভারতীয় এজেন্টের ফাঁদে পা দিলেন সাকিবরা।রেটউইনার বিতর্ক
সাকিব আল হাসান চুক্তি বাতিল করার পর মাতামাতি থেমে যায়। বিটউইনার দাড়ি নিয়ে বিতর্ক। সাকিবকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ আপাতত কমেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়ক করা হয়েছে বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে। এশিয়া কাপেও তার নেতৃত্বেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সেটাও সবার জানা।
বিতর্কিত চুক্তিতে সাকিবকে জড়িয়ে ভারতীয় এজেন্ট সেকেন্ড ইনিংস স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্টের (সিআইএসই) সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবি ক্রিকেটারদের কলকাতাভিত্তিক এজেন্টদের বিষয়ে সতর্ক করেছে এবং দেশ বা খেলার ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান, খেলার সামগ্রী বা পণ্যের অ্যাম্বাসেডর হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছে। বেটউইনার নিউজের মতো বিতর্কিত বেটিং সাইটে যোগ দিতে চার ক্রিকেটারকে প্রভাবিত করার জন্য ভারতীয় এজেন্ট সিআইএসইকে বিসিবি কালো তালিকাভুক্ত করতে পারে। তবে, সিআইএসই-এর মালিক রুদ্রদীপ ব্যানার্জী বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোনো ধরনের বিতর্কিত চুক্তিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং তাসকিন আহমেদকে বেটউইনার নিউজের পণ্য দূত হওয়ার জন্য সিআইএসই সুপারিশ করেছে। জানা গেছে, তাসকিন প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেন। মুশফিকও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। তামিম লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে সময় নিলেও সাকিব জড়িয়ে পড়েন। এ প্রসঙ্গে বিসিবির অফিসিয়াল বক্তব্য ছিল, সাকিবকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, সাকিব বলেছেন, তাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। বলা হয় বিটউইনার একটি নিউজ পোর্টাল। সে কারণেই সে চুক্তি করেছে।’
কে ভুল করেছে সে বিষয়ে বিসিবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি সাকিব। সিআইএসই-এর স্বত্বাধিকারী রুদ্রদীপ ব্যানার্জী ও তার ছোট ভাই কুমারদীপ ব্যানার্জির মাধ্যমে বিতর্কিত এই প্রস্তাব পেয়েছিলেন চার ক্রিকেটার। বিসিবি কর্মকর্তারাও অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিসিবির সিইও নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি শুরু থেকেই এ বিষয়ে সতর্ক। যে কোনো এজেন্ট বিটউইনার নিউজের মতো বিতর্কিত বিষয়ে খেলোয়াড়দের প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে আমি ‘গুরুতর’। ক্রিকেট, বিসিবি এবং খেলোয়াড়দের। তারা এটা নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। তারা শুধু আমার একজন খেলোয়াড়কে জড়িত করেনি, তারা বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল।”
লিটন কুমার দাস, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, আফিফ হোসেন, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, আবু হায়দার রনির মতো ক্রিকেটারদের এজেন্ট রুদ্রদীপ। বিসিবির সঙ্গে সরাসরি ব্যবসাও করেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিং কোচ ওয়াসিম জাফর এবং জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমটও বিসিবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন রুদ্রদীপ। বিসিবি ভবিষ্যতে সিআইএসইর সাথে কাজ করবে কিনা জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা আছে। আমরা আমাদের নীতি অনুযায়ী এগিয়ে যাব। আসলে, তারা বিশ্ব ক্রিকেটের সাথে এতটাই সংযুক্ত, তারা কোচ নিয়োগের মাধ্যমে প্রবেশ করছে। যখন একজন খেলোয়াড় তাদের নিতে যায় তখন তারা ভিতরে যায়। সবাই এই ধরনের বিতর্কিত কাজের সাথে জড়িত নয়। ২৫ শতাংশ এজেন্ট এই ধরনের কাজ করে। তারা খেলার ক্ষতি করেছে। পেশাদাররা জানেন কী করা যায় এবং কী করা যায় না। শাকিব বুঝুক বা না বুঝুক, বিপাকে পড়েছেন তিনি। এজেন্ট জানে যে এটি একটি সমস্যা। কিন্তু শাকিব সেখানে ঠেলে কেন? যার কারণে আমরা সবাই সমস্যায় পড়েছি। আমরা এই এজেন্ট থেকে সাবধান।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের বেশিরভাগ উপকরণ ভারত থেকে আসে। দেশে উৎপাদিত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ব্র্যান্ড কোম্পানি (ব্যাট-প্যাড-শু) আফিফের কিটের পৃষ্ঠপোষক। রুদ্রদীপের মাধ্যমে ঢাকার ক্রিকেটাররা এই স্পন্সর পান। সৌম্যরা তাদের পছন্দের ব্যাট তৈরি করে ভারত থেকে আনতে পারেন। কিট স্পন্সরের সুযোগকে ব্যবহার করে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের বিতর্কিত বিজ্ঞাপনে জড়িত করে বেশি লাভের স্বার্থে। এ বিষয়ে বিসিবির পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, ‘বেটউইনার নিউজের সঙ্গে রুদ্রদীপ সাকিবকে চুক্তিবদ্ধ করার কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানি, সে জড়িত। রুদ্রদীপ আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ক্রিকেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এজেন্ট বা কোম্পানি থেকে সতর্ক থাকার জন্য আমরা খেলোয়াড়দের সবসময় সতর্ক করে দিয়েছি। বিসিবি খেলোয়াড়দের এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ না করার জন্য সতর্ক করেছে যার ভাবমূর্তি বিতর্কিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একজন এজেন্ট ভুল পথ নিচ্ছে কিনা তা খেলোয়াড় জানতে পারবে। কোন চুক্তিতে প্রবেশ করার আগে যথাযথ অধ্যবসায় করা উচিত। এদিক থেকে এজেন্ট বা বিসিবির চেয়ে খেলোয়াড়ের দায় বেশি।
কলকাতার বেশ কয়েকজন ভারতীয় এজেন্ট দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করছেন। বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারদের জোগান দিচ্ছেন রুদ্রদীপ ও কাস্তব লাহিড়ী। বিপিএলের প্রথম আসর থেকেই বিসিবির সঙ্গে যুক্ত কাস্তব লাহিড়ী। জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর দক্ষিণ এশিয়ার এজেন্টও তিনি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে অভিযোগ করা হয়ই না।