স্বপন ভাইকে ফোন করে বলেছিল, হোটেলে আগুন আমাদের বাঁচান
লালবাগের পলিথিন কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো ৬ হোটেল শ্রমিকের সবাই রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ডিউটিতে ছিলেন। আগুন লাগার সময় তারা সবাই হোটেলের দ্বিতীয় তলায় ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুনের তাপে ঘুম ভেঙে যায় ১৯ বছরের স্বপন সরকারের। তিনি ভবনের নিচে খাবার হোটেলে গ্লাস ওয়াশের কাজ করতেন দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে। আগুন নেভানোর আগেই বড় ভাই কাজল সরকারকে ফোন করে বাঁচাতে বলে।
দুপুর ১২টার আগে স্বপন তার মোবাইলে কল দিলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে কাঁদছিলেন কাজল সরকার। তিনি ফোনে বলতে থাকেন, ‘ভাই, হোটেলের ভেতরে আগুন লেগেছে, বের হতে পারছি না। আমাদের রক্ষা কর.’ তারপর ফোন কেটে দিল। আর কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি। বিকেলে শুনল তার ভাই অঙ্গার হয়ে গেছে। চলতি মাসেই কাজে যোগ দেন তিনি।
কান্নায় ফেটে পড়ে কাজল সরকার বলেন, ‘ভাই, চলে গেলি কেন? আমাদের প্রিয় ছোট ভাইটা এভাবে চলে গেল? ওর বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পূরণ না করেই চলে গেল ভাই।’ কাজল জানান, এক মাসের মধ্যে তার ভাইয়ের লেবার ভিসায় ওমান যাওয়ার কথা ছিল। ভিসা হয়ে গেছে।
নিহত বিল্লাল সরদারের শ্যালক জিয়া উদ্দিন জানান, তিনিও ওই এলাকায় থাকেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে বেলালের মোবাইলে কল করেন তিনি। একবার রিং করলেও বন্ধ পাওয়া যায়। মনে হয় তিনি তখনও বেঁচে ছিলেন। বরিশালের মুলাদীর বাসিন্দা বিল্লাল দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। গ্রামের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকে তারা।
১৫ বছর বয়সী মো: শরীফের নানী সালমা বেগমের কান্নায় মর্গের সামনের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। আগুন লাগার খবর পেয়ে নাতিকে ফোন করেন বলে জানান তিনি। নেমে সেখানে দৌড়াও। কোথাও না পেয়ে মর্গে আসেন। তিনি জানান, শরীফ দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় কয়েকদিন আগে কুমিল্লার চান্দিনা গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
নিহত ওসমান বাবুর্চি ছিলেন। সেখানে তিনি ৯ বছর ধরে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট। নিহত মো: রুবেল চলতি মাসে সেখানে রান্নার কাজে যোগ দেন। তার বড় ভাই মো. রাসেল বলেন, রুবেল গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। তবে দুবাইতে রান্নার সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় চলতি মাসেই তিনি যোগ দেন রান্নার কাজে। ১৫ দিন পর সে তার ভাইয়ের পোড়া লাশ দেখতে পায়। তার ছেলে ও স্ত্রী মাদারীপুরের কালকিনির গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
মোতালেবের চাচা নিজাম দপ্তরী বলেন, নিহতের গ্রামের বাড়ি বরিশালের হিজলায়। তারা খুবই গরীব। পরিবারে দারিদ্র্যের কারণে দিনমজুর বাবা তার ছেলেকে ৭-৮ বছর বয়সে ঢাকার একটি হোটেলে কাজ করতে পাঠান। তিনি বিভিন্ন হোটেলে কাজ করেছেন। ছয় মাস আগে এই হোটেলে যোগ দেন। তিনি এখানে কাজ করতে গিয়েছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, নিহত ছয়জন একই স্থানে রয়েছেন। চকবাজার থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শরিফুল ইসলাম জানান, স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেছেন। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত না হলে ডিএনএ নমুনা মিলে লাশ হস্তান্তর করা হবে।