সব হিসাব-নিকাশের বাইরে বাজার

0

কয়েকদিন ধরেই ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যের আমদানি কমেছে। এর মধ্যেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এ দুই কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে গরম বেড়েছে। বাজারের আগুনে পুড়ে গেছে ক্রেতারা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর বড় ধাক্কা লেগেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। প্রথম ধাক্কা আসে সবজিতে। একদিনের ব্যবধানে সব সবজির দাম কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। দুই-তিন দিন পর আবারও বেড়েছে চাল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম।

রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে কাজী আমিনুল ইসলাম নামে এক ক্রেতার কাছে পণ্যের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, ‘কোন পণ্যের দাম বাড়েনি? সবকিছু ইতিমধ্যে ব্যয়বহুল। ডিজেলের দাম বাড়াল সরকার। এখন শুধু গরিব নয়, ঢাকায় মধ্যবিত্তদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম  বলেন, গণপরিবহনের পাশাপাশি সড়ক, রেল ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন মালবাহী পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া কত হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। ভাড়া নির্ধারণ না হওয়ায় পরিবহন মালিকরা নিজেদের মতো করে ভাড়া নিচ্ছেন। এটি সব ধরণের পণ্যকে প্রভাবিত করে।

চার-পাঁচ দিন আগে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা, যা বেড়েছে ৪০ টাকা। সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে ২০ টাকা বেড়ে। এক মাস আগেও ব্রয়লারের দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা।

অর্থাৎ এক মাসের মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বা প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের নুরজাহান চিকেন ব্রয়লার হাউজের মালিক সামশুল হক বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় পিকআপের ভাড়া বেড়েছে। কয়েক মাস ধরেই বাড়ছে মুরগির খাবারের দাম। বাজারে অন্য সব জিনিসের দামও বেড়েছে। এ কারণে মুরগির দাম বেড়েছে।

সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ মাছ-মাংস কম কিনে ডিম দিয়ে তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। ডিমের দামও বাড়ছে। এক মাস আগেও এক ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। সর্বোচ্চ ২৫ টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। এক মাসে দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ।

গত সপ্তাহে চিনি বিক্রি হয়েছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৫ টাকায়। মালিবাগ বাজার গাজী দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. রুবেল বলেন, পাইকারি পর্যায়ে চিনি কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। তারপর কিছু ঘাটতি আছে। পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ হিসাব করলে ৮৫ টাকার নিচে বিক্রি করা যাবে না। এদিকে ডলারের দাম বাড়িয়ে চিনির দাম বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে চিনি শোধক মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কেনা যেত। প্রতি কেজি ১৫ টাকা বেড়ে এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায় ১০ টাকা কেজি। ১০ টাকা বেড়ে দেশি রসুন ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তেজকুনিপাড়া এলাকার পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা সুমন মিয়া জানান, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। গাড়ি ভাড়াও বেড়েছে। কিছু পেঁয়াজ বস্তা হিসেবে কেনার পর খারাপ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ৫৫ টাকার কম বিক্রি করলে লোকসান দিতে হবে।

দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার চাল আমদানির অনুমতি, শুল্ক কমানো, বাজারে প্রচারণাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তাতে খুব একটা সুফল পাওয়া যায়নি। সরকার ১০ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমতি দিলেও আমদানি ছিল খুবই কম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারিভাবে মাত্র ১৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ডলারের দাম বাড়ায় চাল আমদানি করছেন না আমদানিকারকরা। ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে বেশি চাল আমদানি করেন। দাম কমার কারণে ভারতের চাল রপ্তানি কমেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় চালের দাম ৪ ডলার কমে ৩৬০ থেকে ৩৬৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে দেশে চালের বাজার অস্থিতিশীল। বাজারে ৫৪ টাকার নিচে কোনো চাল পাওয়া যাচ্ছে না।

মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা, বিআর-২৮ জাতীয় চাল ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৪ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৯০ টাকায়। তবে ৮ থেকে ১০ দিন আগে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, বিআর-২৮ জাতীয় চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭০ টাকা থেকে ৮৫ টাকা। সে অনুযায়ী চালের দাম সর্বনিম্ন ২ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই কয়েক দিন। এ ছাড়া সব ধরনের পোলাও চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *