উল্টো ডিজেলের ব্যবহার বেড়ে গেছে

0

বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে ডিজেলের ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে দেশে ডিজেল বিক্রি বেড়েছে ২০-৩০ শতাংশ। লোডশেডিংয়ের কারণে বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অনেক কারখানায় চলছে জেনারেটর। এতেই মূলত ডিজেলের চাহিদা বেড়েছে। উল্টো দেশে মজুদ কমছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংক লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে পারছে না, যা তেল আমদানিতে বাধা সৃষ্টি করছে।

পেট্রোল পাম্প মালিকরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে ডিজেল বিক্রি বাড়লেও বরাদ্দ চাওয়ার কথা বলছে বিতরণ কোম্পানি। আমদানি স্বাভাবিক না হলে গত মাসের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম তেল পাম্পে সরবরাহ করা হতে পারে। পাম্প মালিকরা বলছেন, বরাদ্দ কমলে গ্রাহকও তেল কম পাবেন। এদিকে, রাজধানীর একটি ফিলিং স্টেশন মঙ্গলবার নিজস্ব উদ্যোগে মোটরসাইকেলের জন্য সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা এবং গাড়ির জন্য ৩,০০০ টাকা মূল্যে ডিজেল/অকটেন বিক্রির নোটিশ দিয়েছে।

জ্বালানি আমদানিকারক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এলসি সংকটের কারণে আমদানি ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও দেশে সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছে। বিতরণ কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা, যমুনাও তেল সরবরাহ স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে। কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী পাম্পগুলোতে তেল দেওয়া হচ্ছে।

বিতরণ কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসের জ্বালানি তেল বিক্রির মাসিক গড় থেকে (এপ্রিল থেকে জুন) পাম্পের বরাদ্দের তালিকা ৩০ শতাংশ কমানো হয়েছে। যেমন, গত তিন মাসে ঢাকার খালেক সার্ভিস স্টেশনে গড়ে (মাসিক) ডিজেল বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৩ লিটার। সে অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে এই পাম্পের বরাদ্দ থাকতে হবে ৬৬ হাজার ৬৮৯ লিটার। গত ২৪ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ৭ দিনে খালেক সার্ভিস স্টেশনের জন্য ৪৫ হাজার ৪৭৩ লিটার ডিজেল বরাদ্দ করেছে বিতরণ কোম্পানি। দেশের প্রায় সব পাম্পের তালিকা এভাবে রয়েছে।

পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, সরবরাহ কমানোর বিষয়টি বিতরণ কোম্পানিগুলো মৌখিকভাবে জানিয়েছে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে ডিজেল বিক্রি ২০-৩০ শতাংশ বেড়েছে। এমন সংকট এখনো কোনো এলাকা দেখেনি। তবে বরাদ্দ কমলে সংকট কেমন হবে তা আগামী সপ্তাহ থেকেই বোঝা যাবে।

রাজধানীর অধিকাংশ ভবনে জেনারেটর রয়েছে। আগে মাঝেমধ্যে জেনারেটর চলত। এখন প্রতিদিন নিয়মিত ২/৩ ঘণ্টা জেনারেটর চলছে। তাই বেশি ডিজেল কিনতে হচ্ছে বলে জানান রামপুরা উলন রোডের এক ভবন মালিক।

লোডশেডিংয়ের কারণে আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরাঁয় ডিজেল চালিত জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েছে। শিল্পে ডিজেলের ব্যবহারও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মালিকরা। তারা বলছেন, যেসব কারখানায় ক্যাপটিভ জেনারেটর আছে, সেখানে গ্যাসের সংকটের কারণে অনেক সময় ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ চালাতে হয়। যেসব কারখানায় জেনারেটর নেই তাদের লোডশেডিংয়ের সময় ডিজেল জেনারেটর চালাতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ ইকবাল বলেন, পাম্পগুলো চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করছে। মজুদ ও সরবরাহের কোনো অভাব নেই।

দেশে ৪০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুদ রয়েছে। এলসি জটিলতায় এরই মধ্যে স্টক কমে গেছে। সূত্র জানায়, আগস্টে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে ১৯ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ টন ডিজেল আমদানি ঋণ খুলতে পেরেছে বিপিসি।

দেশে সরবরাহ করা জ্বালানি তেলের ৭০ শতাংশই ডিজেল। সূত্র জানায়, এখন ডিজেল ৪ লাখ ৫ হাজার টন, ফার্নেস অয়েল প্রায় ৮২ হাজার ৮০০ টন, অকটেন ১৪ হাজার ৩০০ টন, জেট ফুয়েল ৫৮ হাজার ৭০০ টন, পেট্রোল প্রায় ১৭ হাজার ৬০০ টন এবং কেরোসিন ১৩ হাজার ৪০০ টন। টন দেশে ডিজেলের মজুদ ক্ষমতা ৬ লাখ টনের বেশি। অকটেন মজুদ ক্ষমতা ৪৬ হাজার টন, পেট্রোল ৩২ হাজার টন, কেরোসিন ৪২ হাজার টন। আর ১ লাখ ৫০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল মজুদ করা যাবে।

পেট্রোল ও অকটেন ছাড়া বাকি জ্বালানি তেলের প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। দেশে পেট্রোল ও অকটেনের চাহিদার প্রায় পুরোটাই উৎপাদিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *