এক রনিতেই গলদঘর্ম রেল
শুধু একজন আন্দোলনকারী। যদি ডাক শুনে কেউ না আসে তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘একলা চলো’ গানটি গাই। অব্যবস্থাপনা দূর করার দাবিতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ১২ দিন ধরে কমলাপুর রেলস্টেশনে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তাকে বশ করার জন্য গলদাঘর্ম রেলওয়ে। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগও করছেন না রনি। এদিকে তার দাবি পূরণ করা সহজ নয়, সময়সাপেক্ষ। কিন্তু সেটা না বুঝেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছেন তিনি।
তবে রনি আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সরোয়ার। তিনি যাত্রাবাড়ীর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গতকাল সোমবার কয়েকজন মাদ্রাসা ছাত্রকে নিয়ে তিনি কমলাপুরে আসেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন তিনি। মঙ্গলবার দেড় লাখ লোক নিয়ে মিছিল করে ঢাকা শহরকে অচল করার পরিকল্পনা করছে তারা।
তবে স্টেশন ম্যানেজারের এসব অভিযোগকে হাস্যকর আখ্যা দিয়ে রনি বলেন, আন্দোলনকে বদনাম করতে এসব অযৌক্তিক কথা বলা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত লংমার্চ হবে। তবে একাই করুন। কমলাপুরে তাকে দেখতে যাত্রীরা এগিয়ে আসেন। সমর্থন এবং সংহতি দেখান। সোমবার কিছু টুপি পরা পাঞ্জাবি ছেলে কথা বলল। কিন্তু একই কথা বলা হচ্ছে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
কমলাপুর স্টেশন সূত্র জানায়, যুবলীগ কর্মীরা পরিচয় দিলে স্থানীয় কয়েকজন যুবক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে থানায় নিয়ে যায়। স্টেশন ম্যানেজার দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা লংমার্চে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তবে রেলওয়ে পুলিশের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো তথ্য পায়নি সমকাল। পুলিশ রনি বা অন্য কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি।
এদিকে চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও জামালপুর স্টেশনেও রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
রনি অভিযোগ করেন, ১৩ জুন তিনি ঢাকা-রাজশাহী ট্রেনের তিনটি টিকিট কিনতে চেয়েছিলেন। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হলেও টিকিট পাওয়া যায়নি। রেলওয়ে এবং টিকিট অপারেটর সহজ-সিনোসিস-ভিনসেন্ট জেভির কাছে একটি ধর্নাও ফেরত ছাড়াই ব্যর্থ হয়েছিল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কাছে অভিযোগের প্রতিকার মেলেনি। তাই গত ৭ জুলাই থেকে ৬ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে তারা।
রেলওয়ে সচিব ড. হুমায়ুন কবির বলেন, কর্মকর্তারা একাধিকবার রনির সঙ্গে কথা বলে লিখিত দাবি চেয়েছেন। কিন্তু তিনি তা দেননি। রনি বলেন, ‘দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে’। কিন্তু দুর্নীতির বিষয়টি পরিষ্কারভাবে না বললে রেলওয়ে ব্যবস্থা নেবে কীভাবে?
রনির ছয় দফার একটি হলো যাত্রীদের বিনামূল্যে খাবার ও পানি সরবরাহ করতে হবে। রেল সচিব বলেন, ট্রেনে বা স্টেশনে কোথায় পানি দিতে হবে তা স্পষ্ট করে বলছেন না রনি। রেলওয়ে প্রতিদিন ৩লাখ যাত্রী পরিবহন করে। এত যাত্রীকে বিনামূল্যে পানি দেবে রেল কীভাবে? স্টেশন প্ল্যাটফর্মে টিকিট ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু সেখানে থেকে আইন ভঙ্গ করছে রনি।
রনি জানান, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোর জন্য যে টিকিট লাগে তা তিনি জানেন না। জানার পর তিনি আর প্লাটফর্মে দাঁড়াননি। প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে। তার দাবির মধ্যে রয়েছে ট্রেনের সংখ্যা ও আসন বাড়ানো। ড.হুমায়ুন কবির বলেন, রেলওয়ের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা রয়েছে। ২০৪৫ সাল পর্যন্ত ছয় দফায় ট্রেন বাড়বে। রাতারাতি তা বাড়ানো সম্ভব নয়। রনি বলেন, মাস্টারপ্ল্যানটি তাকে জানানো উচিত।
রনির আরেকটি দাবি হলো সহজ লিমিটেডকে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। হাইকোর্টের রায়ে এই প্রতিষ্ঠানটি এ কাজ পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে চলুন রেলওয়ে আপিল বিভাগে যাই। রনির দাবি টিকিটে কালোবাজারি বন্ধেরও। সচিব বলেন, কালোবাজারি বন্ধে রেলওয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তরিক। ঈদে অনেক অভিযান চালানো হয়েছে। রেলওয়ে স্টেশন ও ট্রেনগুলো আগের চেয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু রাতারাতি কিছুই সম্ভব নয়। সময় দিতে হবে। কেউ সময় না দিয়ে আন্দোলন করলে সমস্যার সমাধান হবে না। আর সিদ্ধান্ত ছাড়াই আত্মহত্যার হুমকি দেওয়া একটি ফৌজদারি অপরাধ।
রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান বলেন, স্টেশন ম্যানেজারসহ রেলওয়ের কর্মকর্তারা রনির সঙ্গে কথা বলে তার দাবিগুলো লিখে দেন। তিনি প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্বাসী। কিন্তু তিনি কোনো যুক্তি মানতে রাজি নন।