ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।গবেষণাকেন্দ্রগুলো চলছে খুঁড়িয়ে
দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। নিয়মিত তহবিল বরাদ্দ থাকলেও এসব কার্যক্রমের বেশির ভাগই চোখে পড়ে না। তাদের কোনো প্রকাশনা নেই, অন্তর্জালে তাদের উপস্থিতি নেই।
ঢাবির ২০২২-২৩ সালের বাজেটে গবেষণা কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ ৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। এ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭টি গবেষণা কেন্দ্রে বরাদ্দ করা হয়েছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেট ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গবেষণা কেন্দ্রগুলো প্রতিবছর গবেষণা, সেমিনার ও ওয়ার্কশপ করে থাকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কেন্দ্রের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে সেন্টার ফর আরবান রেজিলিয়েন্স স্টাডিজ এবং সেন্টার ফর কালচার অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স স্টাডিজের কোনো পরিচালক নেই। তারপরও প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে এ দুটি কেন্দ্রের জন্য ৭ লাখ টাকা ও ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
২০১১ সালে ইনস্টিটিউট অফ এনার্জির সাথে একীভূত হওয়ার পর থেকে, এনার্জি পার্ক রিসার্চ সেন্টারের কার্যত কোন কাজ নেই।
তারপরও প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এর নিজস্ব কোনো পরিচালক নেই। এটি দেখাশোনা করেন শক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ,এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের জন্য ২৩ লাখ টাকা এবং আগামী বছরের জন্য ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. সাইফুল হক জানান, তাদের কিছু সোলার প্যানেল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি রয়েছে, যা তারা গবেষণার অর্থ দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করেন। এ ছাড়া ইনস্টিটিউটের মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজে কিছু খরচ হয়। তবে গত দুই বছরে কিছু জটিলতার কারণে বরাদ্দের টাকা পাননি তারা। এ বছর আবারও বরাদ্দ পাওয়ার উদ্যোগ নেবে। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান স্টাডি সেন্টারের জন্য এ বছর ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। এরপর কেন্দ্রের উদ্যোগে মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন ৬ জন শিক্ষক। এ ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম করা হয়নি। তবে কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সিকদার মনোয়ার মোর্শেদ জানান, তারা স্টাডি সেন্টার নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রকল্পের আওতায় বিদেশে গেছেন। তারা এটি অর্থায়ন করেছে। গবেষণার কাজ না থাকায় তিনি তহবিল উত্তোলন করেননি। আগামী অর্থবছরের জন্য ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন যে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ভাষা, ফিল্ম স্ক্রিনিং এবং ২০১৯ সালে শেষ সেমিনারের পরে কোনও কাজ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টাকা নিতে বলা হলেও তিনি নেননি। কারণ টাকা দিয়ে সে কী করবে, তার কোনো দাম নেই। তবে আগামী অর্থবছর থেকে আবার কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।
প্রশাসনিক গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র ২০০৮ সালে জনপ্রশাসন বিভাগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বছর ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং পরের বছর ১২ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মোবাশ্বের মোমেন এ বিষয়ে নিশ্চিত নন। এখন পরিচালক আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জানি না, আমার নাম দেখছি। কিন্তু পরিচালকের কাজ কী তা আমাকে কখনোই বলা হয়নি। তিনি বলেন, অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক গবেষণা কেন্দ্র ২০০২-০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রয়োজনীয় জনবল ও উদ্যোগের অভাবে কার্যক্রমটি ব্যাপকতা পায়নি। এর পরিচালক, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিক উল্লাহ খান বলেছেন যে তার মেয়াদ শেষ হয়েছে 1 আগস্ট, ২০১৭ এ। তিনি এখন এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এ কেন্দ্রের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ৬ লাখ টাকা।
সবচেয়ে নিষ্ক্রিয় হল বৌদ্ধ ঐতিহ্য সংস্কৃতি কেন্দ্র, উন্নয়ন ও নীতি গবেষণা কেন্দ্র এবং কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র। অধ্যাপক দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য গবেষণা কর্মশালা, আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ কেন্দ্র, বাংলা চরিতবিধান গ্রন্থ প্রণয়ন কেন্দ্র, আরবি শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের আয়োজন করে তাঁর গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছেন।