পানি এসেছে দ্রুত নামছে ধীরে

0

টানা দশ দিন সুনামগঞ্জের তিন উপজেলার অন্তত ছয় লাখ মানুষ বন্যার পানিতে ভুগছেন। বাড়িঘর থেকে নামার পরও অনেক রাস্তায় পানি জমে আছে। সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের পানির স্তর কমে যাওয়ায় এবং ওপরের দিকে (সিলেট জেলা) পানি প্রবাহ অব্যাহত থাকায় বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। কেউ কেউ মনে করেন, নদীটি পানিতে পূর্ণ।

সুনামগঞ্জে ১০ মে থেকে শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ। ১৪ মে পাহাড়ি ঢাল (মেঘালয়-চেরাপুঞ্জির জল) নামতে শুরু করে। ১৬ মে দোয়ারা, ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। ২১ শে মে থেকে সূর্য দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ধীরে ধীরে পানি কমছে।

সুনামগঞ্জের শহরতলীর কালীপুরের বাসিন্দা শহিদ মিয়া জানান, ২০১৭ সালের বন্যার পানিতে তার বাড়ি তলিয়ে যায়। সে পানি দ্রুত নেমে যায়। এবার বন্যার পানি খুব ধীরে কমছে। বাড়ির সামনের রাস্তা এখনো পানির নিচে।

একই এলাকার রইস মিয়া ও আব্দুল কদ্দুস জানান, ঘরবাড়ি থেকে পানি উঠলেও রাস্তার কিছু অংশে পানি রয়েছে। আস্তে আস্তে পানি নামছে। নড়াচড়া করতে অসুবিধা হচ্ছে। গবাদি পশু নিয়েও সমস্যায় আছি।

এই গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা নুরুল মোমেন বলেন, “আমি চল্লিশ বছর আগে কালীপুরে চলে আসি এবং বেশ কয়েকবার বন্যা হয়েছে। ১৯৮৮ সালের বন্যা এবং এই বছরের বন্যা আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে। নদীর ভাটিতে প্রবাহ কম। সুনামগঞ্জ থেকে ভৈরব পর্যন্ত নদী খনন না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।

হাওর কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, অনেক হাওর ও খোলা জায়গায়ও পানি কমছে। সংকুচিত এলাকায় পানি স্থির থাকে। কারণ উজান থেকে এখনো পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যেসব এলাকায় পানি এখনও স্থির রয়েছে, সেখানে পানি কমতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (২) শামসুদ্দোহা বলেন, সুনামগঞ্জে পানি পাওয়ার তিনটি পথ রয়েছে। সুরমা-ধনু হয়ে যায় মেঘনা, সুরমা-কালনী আবার সুরমা হয়ে মেঘনায় এবং সুরমা থেকে সরাসরি মেঘনায়। তিনটি নৌপথই অতীতে প্লাবিত হয়েছে। খনন কাজ সেভাবে হচ্ছে না। শীঘ্রই নদী খননের জরিপ শুরু হবে। নদী ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বন্যার পানিও দ্রুত নেমে আসবে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (১) জহুরুল ইসলাম জানান, সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো প্লাবিত। তার মতে, শুধু সুরমা নদী খনন করলে এভাবে বন্যা রোধ হবে না। এবার মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১৩ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত সাত দিনে ২২০০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। এই পানি ধরে রাখার ক্ষমতা সুরমার নেই। প্রকৌশলী বলেন, সুনামগঞ্জকে আগাম বন্যা থেকে রক্ষা করতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং জরুরি ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *