‘সংকেত শুনলি পরানডা কাঁইপে ওঠে’

0

‘শুনেছি আবার ঝড় আসবে। মাইকে বলে গেল  সতর্ক থাকতে হবে। সাবধান হওয়ার কি আছে? ঝড় আসলে বাঁধ ভাঙ্গবে, আর বাঁধ ভাঙ্গলে ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রতি বছর এই সময়ে আমি সত্যিই ভয় পাই – এটি আসল সংকেত। সংকেত শুনে পরান্দা আপনা থেকেই কেঁপে উঠল। খুলনার কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামের তালেব ঢালী স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে তৈরি ঘূর্ণিঝড় ‘আসানী’র আগাম সতর্ক সংকেত শুনে এসব কথা বলছিলেন। হারিকেন আম্পান এবং ইয়াস গত দুই বছরে দুবার তার বাড়ি ভেঙেছে। বেড়িবাঁধের পাশে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। আবার ঝড়ের সংকেত শুনে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

কপোতাক্ষ নদীর তীরবর্তী মেদিনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ ঢালীসহ অনেকেই রোববার সকাল থেকে বাড়ির পাশের বাঁধ ওঠার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময়ও বাঁধের এই অংশটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ সময় তারা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে একযোগে বাঁধটি বাঁচিয়ে রাখতে পরিশ্রম করেন। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মেরামতের আশ্বাস দেন। কিন্তু গত এক বছরে কোনো কাজ হয়নি। এবার বাঁধ বেশি ঝুঁকিতে।

শুধু তালেব ঢালী ও আবদুস সামাদ নয়; তাদের মতো উপকূলীয় তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের অনেকেই ঘূর্ণিঝড় ‘আসানী’ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বিশেষ করে জরাজীর্ণ ও বিপজ্জনক বাঁধ নিয়ে উদ্বিগ্ন। গত কয়েক বছরে, বছরে একবার বা দুবার ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস দুর্বল বাঁধ ভেঙে নোনা জলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খুলনা সার্কেল সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় তিনটি জেলার ১ হাজার ৭৫৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৫৬ কিলোমিটারের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড়ের তাণ্ডবে বা জোয়ার-ভাটার কারণে এসব বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলার ৬১০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ৩৫ কিলোমিটার, সাতক্ষীরায় ৮০৮ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ১০৪ কিলোমিটার এবং বাগেরহাটে ৩৩৮ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ১৮ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ।

পাউবো খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শফি উদ্দিন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। তবে সব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ দ্রুত মেরামত করা যায় না। কারণ তাদের কাছে সেই অর্থ বরাদ্দ নেই।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ ভারতে আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস ছিল। তবে এর প্রভাব খুলনা উপকূলে সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।

গতকাল সকালে কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তারা জানান, অন্যান্য দুর্যোগের মতো এলাকাবাসীকে মাইকিং করে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে এ ধরনের সতর্ক সংকেত শোনার পর আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। যেসব এলাকায় বাঁধ দুর্বল, সেখানে মানুষ সেগুলো মেরামতের চেষ্টা করছে। গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগিকে নিরাপদ স্থানে সরানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, তারা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। একই সঙ্গে দুর্যোগ প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *