আগের পেশায় ফিরতে পারেননি দেড় কোটি

0

দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার চকবাজারে শওকত আলীর একটি ছোট বাচ্চাদের খেলনার দোকান ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু করোনার পুরো সময় তাকে প্রতি মাসে ভাড়া দিতে হয়েছে। শওকত আলী জানান, ভাড়া পরিশোধ ও বকেয়া পরিশোধ না করে তিনি দোকান ছেড়েছেন। তিনি এখন বেকার। এখন তার পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। একটি জরিপ অনুসারে, শওকত আলীর মতো ৩ কোটি ৫৯ লাখ মানুষ করোনভাইরাসজনিত কারণে তাদের চাকরি হারিয়েছে।

এরই মধ্যে অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। অস্বস্তিকর জায়গায় থাকা সত্ত্বেও লকডাউনের সময়ের তুলনায় বেকার মানুষের হার কমেছে। কিন্তু পর্দার আড়ালে জরিপে উঠে এসেছে আরেকটি অস্বস্তিকর তথ্য। চাকরির বাজারে পা রাখতে সক্ষম প্রায় দেড় কোটি মানুষ আগের পেশায় ফিরতে পারেননি বলে জানা গেছে। তারা করোনার আগে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিল। তাদের পূর্ববর্তী পেশায় ফিরে আসতে অক্ষম, তারা কৃষি, শিল্প, সেবা, নির্মাণ ও পরিবহন শ্রমিক এবং পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে। বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল বারকাতের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ভাইরাসের সংকট থেকে উন্নত বাংলাদেশ খুঁজছেন”, করোনায় যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশই আর ফিরে আসতে পারবেন না। চাকরি বা পেশা। কারণ, শ্রমবাজারের ধরণ বদলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষতার গুরুত্ব ও উপযোগিতা বাড়ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আর্থিক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের একটা বড় অংশ মূল স্রোতে ফিরতে পারেনি। বর্তমানে অনেকেই বেকার। এ ছাড়া দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে বহু মানুষ। তাতে দেখা দিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। এই অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারকে এখন সামাজিক নিরাপত্তা পরিধির আকার বাড়াতে হবে এবং কর্মসূচির তহবিলের সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করতে হবে।

করোনায় অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারকে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ। তিনি বলেন, গ্রামে যেসব ক্ষুদ্র প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলো বন্ধ করা যাবে না। এসব ক্ষুদ্র প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

করোনার সময় যেসব খাতে মানুষ চাকরি হারিয়েছে তার বেশিরভাগই সেবা খাতে। এ খাতে বেকার হয়ে পড়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ মানুষ।

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরী বলেন, করোনায় বহু মানুষ জীবিকা হারিয়েছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় অনেকেই আগের জায়গায় ফিরতে পারেননি। অনেকের অবস্থা খারাপ। তাদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সেটা করতে হবে অর্থনীতির প্রসার ঘটিয়ে। অর্থাৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এবং তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে সাহায্য করতে হবে।

আগের পেশায় ফিরতে পারেননি : নোয়াখালীর চাটখিল পাঁচগাঁও গ্রামের মো. সেলিম ঢাকার মহাখালীতে একটি গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। রাজধানীর হাজারীবাগে মা ও বোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। কিন্তু করোনায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন। তিনি জানান, আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আগের পেশায় ফিরতে পারেননি তিনি।

রাজধানীর বনানীর একটি বাসায় প্রাইভেটকার চালক ছিলেন শাকিল। করোনায় চাকরি হারিয়েছেন। শাকিল জানান, তিনি এখনো বেকার। মাঝেমধ্যেই তিনি প্রতিদিন রাজধানীর বেড়িবাঁধে অটোরিকশা চালান। কিন্তু তাও নিয়মিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *