আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি, নকশা পরিবর্তন

0

পরিবর্তন হয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়ির নকশা। একই সঙ্গে এসব বাড়িকে আরও মজবুত ও টেকসই করতে সাতটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাড়ি নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা।

মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বছরের মধ্যে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর নির্মাণের ঘোষণা দেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দুইশত একর জমি দিয়ে নতুন ঘর পেয়েছে এক লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি গৃহহীন পরিবার।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আরও এক লাখ গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নতুন নকশা অনুযায়ী এসব বাড়ি নির্মাণ করা হবে। নতুন বাড়িগুলো আগের ঘরগুলোর তুলনায় আরও মজবুত ও টেকসই হবে। এ জন্য সাতটি নির্দেশনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- অনুমোদিত নকশা অনুসরণ করে বাড়ি নির্মাণের উপযোগী উঁচু জমিতে গুণগত মান নিশ্চিত করার পরই নির্মাণ কাজ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নতুন ভরাট মাটি, নরম মাটি, খাল-বিল ও নদীর তীর এবং নিচু জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা যাবে না। প্রতিটি কাজ নিবিড় তদারকির মাধ্যমে করতে হবে। মূল বাড়ি, রান্নাঘর, বারান্দাসহ বাড়ির বিভিন্ন অংশের মাপ ঠিক রাখতে হবে। প্রতিটি বাড়ির অনুকূলে দুই শতাংশ জমি নিশ্চিত করতে হবে। গাইডওয়ালের প্রয়োজন হয় এমন এলাকায় বাড়ি তৈরি করা যাবে না।

এছাড়াও, দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিটি বাড়িতে ভিত্তি, স্তম্ভ-বারান্দার কলাম, বিম, লিন্টেল, সানস্ক্রিন রড, ওয়েল্ডিং, ইটের গাঁথনি, কিউরিং, কাঠের ফ্রেম এবং প্রয়োজনীয় পুরুত্বের টিন রয়েছে। সিমেন্ট, বালি এবং ক্ষয় অনুপাত সহ মানের অনুমান অনুযায়ী ঢালাই কাজ করা উচিত। নির্দেশনা অনুযায়ী নকশা অনুযায়ী দরজা-জানালা তৈরির পর রেড অক্সাইড প্রাইমার দিতে হবে। তারপর এনামেল পেইন্ট লাগাতে হবে। এক ব্যাগ সিমেন্টের সাথে তিন ব্যাগ বালি মিশিয়ে প্লাস্টার করতে হবে। দেয়ালের প্লাস্টার ঠিকমতো শুকিয়ে যাওয়ার পর ঘর রং করা দরকার। স্যানিটারি এবং নেমপ্লেট স্থাপনের কাজ ১০০% নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন যে ১২ অক্টোবর, ২০২০ সালে চালু হওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্লোগান ছিল “আশ্রয় পাওয়ার অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার।” প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গত বছরের জানুয়ারিতে ৬৯ হাজার ৯০৪টি পরিবার এবং জুনে দ্বিতীয় দফায় ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবার দুইশ একর জমিতে স্থায়ী ঘর পেয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে ‘জমি নেই, ঘর নেই’ এমন পরিবারও নতুন বাড়ি পাবে।

বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া। প্রতিটি পরিবারকে পানীয় জলও দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে স্যানিটেশনের আওতায় আনা হচ্ছে।

ব্যবহার করা হচ্ছে অতিরিক্ত রড। আশ্রয়ন প্রকল্পে জলাশয়, বনায়ন ও পশুর খামারও স্থাপন করা হচ্ছে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, বরগুনার আমতলী, শেরপুর, বগুড়ার শাজাহানপুর, আদমদীঘি, হবিগঞ্জের মাধবপুর, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, সুনামগঞ্জের শাল্লা, মুন্সীগঞ্জ সদর, লালছর্ণী, কিশোরগঞ্জের জামপুর, ইসলামপুর, জামপুর, মো. , ময়মনসিংহ সদর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, ভোলার লালমোহন, মানিকগঞ্জের ঘিওর, কুড়িগ্রামের রৌমারী, বরিশাল সদর ও অভিষেকের হরিপুর উপজেলা।

এ সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়ি নির্মাণের নীতিমালা মানা হয়নি। সে সময় অনেক বাড়ি নির্মাণে ত্রুটি ছিল। মানও ঠিক নেই। বাড়ির দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। পিলার ভেঙ্গে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে, দেয়াল এমনকি ধসে পড়েছে। বাড়ি নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণগুলোও ছিল নিম্নমানের। নিচু এলাকায় ঘরবাড়ি নির্মাণের কারণে হালকা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জমির মালিকদের বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *