কমেছে মাছের উৎপাদন।পানি প্রবাহের কারণে হাওরে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে
এবার বর্ষায় হাওরে খুবই কম পানি । যেহেতু বর্ষাকাল থেকে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ নেই, তাই মাছের দেখাও আগের মতো নেই। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে হাওরের জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বছর সহ গত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টিপাত কমছে। এ বছর হাওরে পানির স্তর কম হওয়ায় কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তন এর জন্য দায়ী। বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপক বন উজাড়ও কম বৃষ্টিপাতের অন্যতম কারণ।
হাওরের বাসিন্দারা জানান, প্রতিবছর বর্ষায় আফালের (প্রবল স্রোত) সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের ঘরবাড়ি রক্ষা করতে হয়। কিন্তু এ বছর হাওরে পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নেমে এসেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে ২০২০ সালে পানির প্রবাহ বেশি ছিল। কিন্তু এবার হাওরের দৃশ্য অনেকটাই মলিন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক প্রকৌশলী এবং ‘হাওর অঞ্চল’ সংস্থার সমন্বয়ক এনায়েতুর রহমান বলেন, এভাবে পানির মাত্রা কমলে আগামী কয়েক বছরে দেশটি মিঠা পানির মাছের অভাবের মুখোমুখি হবে। খাদ্য উৎপাদনও কমে যাবে। পরবর্তী প্রজন্ম খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারবে না। এটি ছাড়া, হাওরে পরিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের এখনই এ ব্যাপারে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে।
হাওর ও মৎস্য বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আজহার আলী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি নদীর উৎসে বাঁধ নির্মাণ করে নদীর পানি বন্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু উন্নয়ন সঠিক জরিপের ভিত্তিতে হচ্ছে না। ফলে হাওরে পানির স্তর কমছে। এটি হাওর এলাকার একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রাকে বদলে দিচ্ছে। বর্ষায় জেলেরা হাওরের ভাসমান পানিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এবার অপর্যাপ্ত পানির কারণে মাছের উৎপাদন কমেছে। জেলেপল্লীতে মাছ ধরার উৎসব অনেক কম। তাদের মধ্যে হাহাকার।
হাওরবাসীর মতে, বর্ষার স্রোতে প্রাকৃতিকভাবেই মাছের প্রজনন হয়। পানির অভাবে মাছের প্রজনন কমে যাওয়ায় হাওরে মাছ নেই। অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পানির অভাবে বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, হাওরে পানি না থাকায় জমিতে পলি কম থাকবে। এতে ফসলের উৎপাদন কমে যাবে। রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যাপকভাবে জমিতে ব্যবহৃত হয়। হাওরে পানির প্রবাহের ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব দূর হবে। এ বছর কাঙ্ক্ষিত পানির অপ্রাপ্যতার কারণে প্রশমনের মাত্রা কমেছে। তা ছাড়া জমিতে পড়ে থাকা আগাছাসহ বিভিন্ন ঘাস পানিতে পচে যায় এবং জৈব সার তৈরি করে। যেহেতু এখন এই অবস্থা নেই, তাই উৎপাদন আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাছ, কাঁকড়া, শামুক এবং ঝিনুকসহ পানীয় প্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে, যা জীববৈচিত্র্যের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নূর আলম বলেন, বর্ষাকালে হাওরের ৯০ শতাংশ এলাকায় পানি থাকে। শত শত বছর ধরে এই প্রাকৃতিক আইনের আকস্মিক ব্যাঘাত হাওরে খাদ্য শৃঙ্খলা এবং জীববৈচিত্র্যকে ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান বলেন, কম বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক কারণে হাওরে পানির প্রবাহ এবার কম। হাওরের বাসিন্দাদের তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত দূরত্ব ভ্রমণ করতে হয়। সরাসরি নৌকায় পৌঁছতে না পারা মানে সময় এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা।