শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।ক্যাম্পাসে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে শিক্ষক রাজনীতি
উপাচার্যের নির্দেশে গুলি চালানো হচ্ছে, আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) একটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের কিছু দাবির প্রতি সংবেদনশীলভাবে সাড়া দিতে কর্তৃপক্ষের বিলম্বের জন্য আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর পেছনে শিক্ষক রাজনীতির ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা লোকজন।
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে লাঠিচার্জসহ মাত্রাতিরিক্ত পুলিশি বাহিনী ব্যবহার আরও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। সেখানে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণের দাবি ওঠে। করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার পর হঠাৎ অস্থিতিশীলতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দাবি পূরণের ঘোষণার মুহূর্তে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করাসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পেছনে ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেছেন উপাচার্য। বিভিন্ন দল পরিস্থিতির ‘ফায়দা’ নেওয়ার আশ্রয় নিয়েছে বলেও প্রচার চলছে। এ ঘটনায় কারও ‘ইন্ধন’ থাকলে পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
সভাপতি জাফরিন আহমেদ লিজার অসদাচরণের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার সিরাজুনেছা চৌধুরী হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। শিক্ষার্থীরা শুক্রবার থেকে ডিনের পদত্যাগসহ তিন দফা আন্দোলন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। আল্টিমেটাম দিয়েও কাজ না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ বাড়ছে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। ওইদিন সন্ধ্যায় উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাধারণ ছাত্র আন্দোলনে এমন পুলিশি অভিযান আর কখনো হয়নি। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল দুপুরের মধ্যে সবাইকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা মানেনি। উল্টো রোববার রাতে তা ভাইস চ্যান্সেলর বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।
গতকাল উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পরও যারা আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন তাদের অনেকেই বহিরাগত বলে দাবি করেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিদেশিদের ইন্ধনে এখন আন্দোলন চলছে। রবিবার রাত থেকেই ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা প্রবেশ করেছে বলে তার কাছে তথ্য রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
তবে উপাচার্য মিথ্যাচার করছেন অভিযোগ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, তার নির্দেশে পুলিশ হামলা ও গুলি চালায়।
এ ঘটনার শুরু থেকেই সিরাজুন্নেছা হলের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ নেতাদের সঙ্গে সমঝোতাসহ নানাভাবে জড়িয়ে পড়েন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। তুলসী কুমার দাস। তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি পুরো বিষয়টি মিমাংসা হয়ে গেছে। রোববার কোষাধ্যক্ষ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলে হঠাৎ পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এ ঘটনায় হতবাক শিক্ষক সমিতি।
সূত্র জানায়, আগামী মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষকদের মধ্যে কোন্দল রয়েছে। যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে ছাত্রদের হলের সমস্যা বের করে আনতে কিছু শিক্ষক ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ বলেছেন, ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষক রাজনীতির প্রভাব পড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, সিরাজুন্নেছা হল ইস্যু নিয়ে আলোচনা দীর্ঘায়িত হওয়ায় অস্থিরতা আরও বেড়েছে। তারা বলেন, উপাচার্য সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় ছিলেন। বেশ কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেছেন যে উপাচার্য প্রথমে পরিস্থিতি সামাল দিতে অবহেলা করেছিলেন এবং কিছু শিক্ষক তাকে ভুল বুঝেছিলেন।
পুরো ঘটনাটিকে ‘লজ্জাজনক ও দুঃখজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী-বাম শিক্ষকদের প্যানেল অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আখতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে তার সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার।