নিরাপত্তা ঝুঁকিতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরসহ ৫ স্থাপনা
দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য এগুলোকে কেপিআই (কী পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর বিমানবন্দরসহ কয়েকটি সরকারি স্থাপনা কেপিআই-এর অন্তর্ভুক্ত হলেও নিয়ম না মানার কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর ছাড়াও নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, সৈয়দপুরের বাংলাদেশ লোকোমোটিভ অ্যান্ড ওয়াগন ওয়ার্কশপ, নেয়ামতপুরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জসহ সরকারি বিধিমালা না মানার কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি দেশটির একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এই মাসের শুরুতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএ) চেয়ারম্যানের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে পাঠানো প্রতিবেদনে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দর এলাকা খুবই স্পর্শকাতর। এ কারণেই এটি কেপিআই-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার সঙ্গে দেশের সুনাম জড়িত। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ব্যবস্থার কথা বলার পরও ব্যবস্থা না নেওয়া অপরাধ। এ ছাড়া রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংক্রান্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদন দ্রুত আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। তা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
তবে এখানে নিরাপত্তার কোনো দুর্বলতা নেই বলে দাবি করেছে সৈয়দপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কেপিআই-এর অন্তর্ভুক্ত এলাকা হিসেবে যা যা করা দরকার সবই করা হয়েছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেপিআই-এর যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সুনাম জড়িত। তদন্তে নীলফামারী জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি ও বিচ্যুতি পাওয়া গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসব বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সর্বশেষ জরিপের সুপারিশে নিরাপত্তার স্বার্থে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। জরিপে দেখা গেছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে প্রবেশের ব্যবস্থা দুর্বল এবং এনএসআই কর্তৃক শ্রমিকদের জন্য কোনো উচ্ছেদ পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেই। এ ছাড়া স্পর্শকাতর এলাকায় প্রবেশের কোনো পাসের ব্যবস্থা নেই, সীমানা প্রাচীরের আশপাশের ঝোপঝাড়ও পরিষ্কার করা হয়নি। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বার্ষিক অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
সৈয়দপুর পাওয়ার প্ল্যান্টে সবজি বাগান পরিষ্কার করা হয়নি, স্ক্যানার মেশিন/আর্চওয়ে গেট নেই, এবং এনএসআই দ্বারা কোনও যাচাই করা হয়নি। বন্দুকের আওতাভুক্ত স্থাপনাগুলোর ওপর কোনো নজরদারি নেই। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী দুর্যোগের সময় কোনো এসওপি নেই।
এদিকে নীতিমালা অনুযায়ী নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি স্থাপনের চারপাশে সীমানা প্রাচীর, তোরণ গেট ও উচ্ছেদ পরিকল্পনা নেই। আবার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দ্বারা শ্রমিকদের যাচাই-বাছাই করা হয়নি এবং দেয়ালে কাঁটাতারের বেড়াও নির্মাণ করা হয়নি। কোনো বিভাগীয় নিরাপত্তারক্ষী নেই, শ্রমিকদের জন্য NSI দ্বারা নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ এবং একটি উচ্ছেদ পরিকল্পনা।
অপরদিকে সৈয়দপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সীমানা প্রাচীরের উচ্চতা কম, নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায় অবাধে স্থাপনাটিতে মানুষ ও পশুপাখি প্রবেশ করতে পারছে। উপরন্তু, কোন উচ্ছেদ পরিকল্পনা, ভিজিটর রেজিস্ট্রার, বা নিরাপত্তা প্রহরী পোস্ট নেই. আবার, কর্মচারীরা গোয়েন্দাদের দ্বারা যাচাই করা হয় না এবং সীমানা প্রাচীরের উপর ওয়াই আকৃতির কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়নি।
এছাড়াও, বাংলাদেশ লোকোমোটিভ এবং ওয়াগন ওয়ার্কশপেও আর্চওয়ে গেট এবং স্ক্যানার নেই। হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে শরীরের অনুসন্ধান করা হয় না। কর্মচারীদের যাচাই করা হয় না। NSI দ্বারা কোন নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেই. বাউন্ডারি ওয়ালে কাঁটাতারের বেড়া ও এসওপি নেই। এ ছাড়া ভিজিল্যান্স টিমের নিয়মিত পরিদর্শন ও নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক নেই। আবার বার্ষিক প্রতিবেদনও পাঠানো হয় না। এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক এ কে এম বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, “সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ভালো। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে তা আগের পর্যবেক্ষণ। এগুলো সবই বাস্তবায়িত হয়েছে। তাদের (গোয়েন্দাদের) সে অনুযায়ী প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। রুটিন, তাই হয়তো তারা আগের রিপোর্ট পাঠিয়েছে এই বিমানবন্দরে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই।”