অবৈধ সেই ইটভাটা গুড়িয়ে সিলগালা করলো ভ্রাম্যমাণ আদালত
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়নের হুলাইন পাচুরিয়া এলাকায় অবস্থিত এআরএইচ ব্রিকফিল্ডে অভিযান পরিচালনা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরিবেশ আইন অমান্য করে অবৈধভাবে পরিচালনার অপরাধে পরিচালিত অভিযানে অবৈধ ইটভাটার চিমনি ধ্বংস এবং সকল কার্যক্রম বন্ধ করে সেটি সিলগালা করা হয়।
গতকাল বুধবার বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী। এসময় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক ঊর্মী সরকার উপস্থিত ছিলেন।
অবৈধ ইটভাটার মালিক উপজেলার হুলাইন পাচুরিয়া এলাকার বাসিন্দা চৌধুরী হাসান মাহমুদ আকবরী ও হেলাল উদ্দিন চৌধুরী সুমন। ইটভাটার পাশেই চৌধুরী হাসান মাহমুদ আকবরীর মালিকানাধীন জনতা স’মিল রয়েছে। সেখান থেকেই কাঠ চিরাই করে ইটভাটায় পোড়ানো হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনার দায়ে সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন পটিয়া উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা। তখন এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এরপরও আইন অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা করে আসছিল তারা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসাবে পটিয়া উপজেলার হুলাইন এলাকায় এআরএইচ ব্রিকফিল্ডে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আইন অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ব্রিকফিল্ডটি চলছে। এর আগেও দুইবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। এরপরও মালিকপক্ষ জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়নি। আজকেও আমরা চেয়েছিলাম কিন্তু প্রয়োজনীয় কোন কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেনি।
এটির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেমন আইন অনুযায়ী লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। পাশেই একটি কলেজ ও বাজার রয়েছে। পাশাপাশি কৃষি জমির টপ সয়েল এখানে পোড়ানো হচ্ছে এবং কাঠও পোড়ানো হচ্ছিল। তাই অভিযানের অংশ হিসাবে ধ্বংস করে ইটভাটাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে; যাতে ভবিষ্যতে কেউ অবৈধ কার্যক্রম চালাতে না পারে।
অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধের অভিযান চলমান। এরই অংশ হিসাবে গতকাল হুলাইন সালেহ নুর ডিগ্রি কলেজের সামনে অবৈধ এআরএইচ ইটভাটা ধ্বংস করে সিলগালা করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার কয়েক’শ ফুট উত্তরে জনতা স’মিল। সেটির মালিক চৌধুরী হাসান মাহমুদ আকবরী। সেখানে অবৈধভাবে বনের গাছ চিরানো হয় এবং অবৈধভাবে কাঠ পাচার হয়। ওই স’মিল থেকেই ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর জন্য নেওয়া হয়। গতকাল অভিযান পরিচালনার সময় কাঠ পোড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের (২০১৩) ধারা-৪ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। একই আইনের ধারা (৮) এর (১) অনুযায়ী লাইসেন্স থাকলেও লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের সুযোগ নেই। ধারা-৫ এর (১) অনুযায়ী- কৃষিজমি, পাহাড় বা টিলার মাটি কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না। ধারা-৬ এ বলা হয়েছে- ইট পোড়ানোর কাজে কাঠ ব্যবহার নিষেধ।