কে হচ্ছেন নতুন প্রধান বিচারপতি?চলতি সপ্তাহে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়
দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন। এদিন তার দায়িত্ব পালনের ৪৭ মাস হবে। গত দুই দশকে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বারের মতো এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তিনি। এখন প্রধান বিচারপতি পদে তার উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়ে আইনি অঙ্গনে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ করা হবে নাকি গতবারের মতো জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আপিল বিভাগের অন্য কাউকে পদে নিয়োগ দেওয়া হবে তা আগ্রহের বিষয়। আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আপিল বিভাগের তিন বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের জন্য আলোচনা চলছে। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী তারা হলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান (ননী)।
সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যে কোনো বিচারক বা প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে পারেন; সে কারণে পুরো বিষয়টি এখন রাষ্ট্রপতির কাছে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ চলতি সপ্তাহের মধ্যে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবেন। ৯৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করে অন্যান্য বিচারক নিয়োগ করবেন।”
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। পদ শূন্য হলে তাকে নিয়োগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা তার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি।
২০১৭ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের পর বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির (৮২ দিন) দায়িত্ব পালন করেন। যার জন্য রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগে বিলম্ব করেন। এখন আর তেমন কিছু নেই। আশা করি যথাসময়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পাবেন। রাষ্ট্রপতি যাকে নিয়োগ দেবেন সে অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করবে।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আপিল বিভাগে পাঁচজন বিচারপতি রয়েছেন। চাকরির নিয়ম অনুযায়ী তাদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর। বয়স অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাচ্ছেন।
আইন ও বিচার বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে নানা সমীকরণ রয়েছে। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না থাকায় এ নিয়োগে তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং আসন্ন নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা ও বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়ার পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে।
সংবিধান অনুযায়ী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে হওয়ার কথা। এই জ্যেষ্ঠতার পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান (ননী) হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই তিন ধাপে প্রধান বিচারপতি মো. বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেলে অন্য দুই বিচারপতি সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী দীর্ঘদিন আপিল বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চের প্রধান ছিলেন। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী তিনি প্রধান বিচারপতি পদের দাবিদার। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানও হয়েছেন। যাইহোক, গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়েও আলোচনা করেন।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে নিয়োগ সংক্রান্ত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জানতে চাইলে আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, রাষ্ট্রপতির নির্দেশের অপেক্ষায় আছি, পাওয়া গেলে রুল মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।