ছাত্রলীগ নেতার ইয়াবা চক্রে নারীসহ ১৩ জন

0

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর সরকারের ইয়াবা চক্রে এক নারীসহ অন্তত ১৩ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে জোনাকি নামে এক নারীও রয়েছেন। এগুলোকে তিন ধাপে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান এনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যবহার করা হতো। জাহাঙ্গীর প্রতি পিলে ১০ টাকা কমিশন নিয়ে কলেজ ছাত্রদের বাহক হিসেবে ব্যবহার করতেন। তার পক্ষে এই সিন্ডিকেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন রুবেল খান নীরব, মো. মহসিন ও জোনাকি। তিনজনই এখন পলাতক। গত শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকায় একটি প্রাইভেটকার থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গাজীপুর ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর সরকারের আমলে চালানটি বের হয়। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইয়াবা সিন্ডিকেটের তার চার সহযোগীকে এখন তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রোববার জাহাঙ্গীরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান জানান, ছাত্রলীগ নেতার ইয়াবা চক্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে একাধিক দল কাজ করছে। মাদকের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যত বড় রাঘববোয়ালই হোক না কেন তাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

এক বছর ধরে গাজীপুর ছাত্রলীগ নেতার ইয়াবা চক্রে বাহক হিসেবে কাজ করছেন রাকিবুল হাসান। সে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে পড়ছে। রকিবুল জানান, কক্সবাজার থেকে গাজীপুরে চারটি ইয়াবার চালান আনার সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। কৌশল হিসেবে জাহাঙ্গীর সরকার ও রুবেল খান নীরব ওরফে নীরব মামার প্রাইভেটকারটি প্রথমে কক্সবাজারে পাঠানো হয়। এরপর যাত্রীবাহী বাসে করে কক্সবাজারের উদ্দেশে। তাদের নামে আগে থেকেই বুক করা আছে দামি হোটেল। জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মহসিন নামে এক ব্যক্তি আগে থেকেই ইয়াবা বড়ি ছোট প্যাকেটে ভরে একটি প্রাইভেটকারে চেসিসের নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। এরপর প্রাইভেটকার বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাদের। একবারে চালক ছাড়া গাড়িতে তিন/চারজন বাহক। তিনি দাবি করেন, কক্সবাজারে যাওয়ার সময় পথে একটি চেকপোস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরে ফেলে। গ্রামের বাড়ি গাজীপুর হলেও মহসিন থাকেন ঢাকার বারিধারায়। জাহাঙ্গীরের অনুগত সহযোগী হিসেবে তার প্রধান দায়িত্ব ছিল কক্সবাজারের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে ইয়াবার চালান সংগ্রহ করা এবং ঢাকায় ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত করা। এই চক্রটি মূল ‘কাট-আউট’ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। যথাযথ প্রাইভেটকারে ইয়াবার চালান পৌঁছে দেওয়ার পর বাহকদের সঙ্গে মহসিনের তেমন যোগাযোগ নেই। গাজীপুরে রুবেলের কাছে চালান পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব বাহকদের। সেখানে হাত বিনিময়ের পর তিনি বাহককে প্রতি পিল ১০ টাকা দেন। সড়কে কোনো সমস্যা হলে বাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে পরামর্শ দেন জাহাঙ্গীর।

রকিবুল আরও জানান, এই সিন্ডিকেটে জোনাকি নামে এক নারী রয়েছে। দু-একবার তাকে বাহক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে। জোনাকির পরিচয় জানতে চাইলে রুবেল সার্কেলের অন্যদের কাছে নিজেকে তার ‘বান্ধবী’ বলে পরিচয় দেন।

জানা গেছে, রকিবুল এর আগে কক্সবাজার থেকে রুবেলের কাছে তিন দফায় তিনটি চালান নিয়ে এসেছিল, যার একটিতে ৭০ হাজার বড়ি এবং বাকি দুটিতে ৫০ হাজার বড়ি ছিল। তাদের বাহক হিসেবে ১৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তারা একসাথে টাকা ভাগাভাগি করত। চক্রটির লক্ষ্য প্রতি মাসে একটি চালান আনা।

জাহাঙ্গীরের ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্যরা মূলত গাজীপুরে ব্যবসা করে আসছিল। এ চক্রে তার সঙ্গে রয়েছে শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকার বাসিন্দা এনামুল মুন্সী, একই এলাকার পিস্তল মাসুদ, এমসি বাজার এলাকার মো. আশাদ, রুবেল ইসলাম, রকিবুল হাসান, ফিরোজ, সূর্য বর্মণ শান্ত, রনি আহমেদ, ভাওয়াল কলেজের শিক্ষার্থী হৃদয়, জোনাকি, রুবেল খান নীরব ও গাজীপুরের বর্মী বাজার এলাকার মহসিন।

গাজীপুরের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের পক্ষে গাজীপুরে গ্রুপের নেতৃত্ব দেওয়া রুবেল খান একসময় মধ্যপ্রাচ্যে থাকতেন। দেশে ফিরে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। তারা রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য ইয়াবা ব্যবসায় নামে। দামি গাড়ি, বাড়িঘর ও কারখানা গড়ে তোলেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গার্মেন্টসে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।

শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ইকবাল সরকারের ছেলে জাহাঙ্গীর সরকার। ২০১৬ সালে তিনি গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। তার বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ বিভিন্ন ধারায় আরও ছয়টি মামলা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় কয়েকটি মাদকের আস্তানা রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন টঙ্গী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। এক বছর আগে মাদকের চালানসহ গ্রেফতারের পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ ছাড়া সোহেল রানা, লোকমান ও রহিমের বিরুদ্ধে পরিচয় ব্যবহার করে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *