হরতাল-অবরোধের জেরে অনলাইন ক্লাসে ফিরছে বেসরকারি স্কুলগুলো
বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ করে অনলাইনে ক্লাসে ফিরছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এমন উদ্যোগ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেন অন্তর্ভুক্ত। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সরকারি কোনো নির্দেশনা না থাকায় অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চললেও ধীরগতিতে চলছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বন্ধ থাকা একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে অধিকাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। স্কুলে উপস্থিতির হার খুবই কম। যানজট থেকে শুরু করে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়েন।এসব কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
‘নভেম্বর মাসের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়নের নির্দেশনা রয়েছে উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখতে অনলাইন ক্লাস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া এবং অভিভাবকদের অনলাইন গ্রুপে পাঠদান মনিটর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীরা যাতে স্বাভাবিক দক্ষতার সঙ্গে পরীক্ষায় বসতে পারে সেই লক্ষ্যে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নোটিশ পাওয়া গেছে।
রবিবার থেকে ঘোষিত রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠানো হয়েছে। শাটডাউন চলাকালীন, শিক্ষার্থীদের অনলাইন পাঠদান এবং অভিভাবকদের অনলাইন গ্রুপে অ্যাসাইনমেন্ট পর্যবেক্ষণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর আগে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ২৮ অক্টোবর এবং ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেন, তবে কিছু কারিগরি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই প্রধান সড়কের কাছাকাছি বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে স্কুল বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নিজ উদ্যোগে প্রধান সড়কের আশপাশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে ৫০,০০০ কিন্ডারগার্টেনে বর্তমানে প্রায় এক কোটি শিশু অধ্যয়ন করছে। নাশকতার ভয়ে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে অস্বীকার করেন। নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষ করতে বাধ্য হওয়ার পর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার অনলাইন ক্লাসে ফিরে যাচ্ছে।
কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার জন্য কোন নতুন নির্দেশিকা বা উদ্যোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময় থেকেই আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে এই শিক্ষার গতি কিছুটা ধীর হলেও চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন পাঠদান প্রতি মাসে মনিটরিং করা হয়। তবে বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় এই অনলাইন ক্লাস পরিচালনার বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা পাইনি।
ইংলিশ মিডিয়াম প্যারেন্টস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আজম খান বলেন, “অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের সড়কে জনজীবনের নিরাপত্তা কম। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচি বেশি শঙ্কিত। ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের মধ্যেই। গোলাগুলি, নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানো হচ্ছে না।
অনলাইনে পাঠদান প্রসঙ্গে ফেরদৌস আজম বলেন, ‘অনলাইনে পাঠদান শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট নয়। আবার অনেক শিশু ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ এবং শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসার জন্য আমরা অপেক্ষা করব।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির গণসভা এবং ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ কর্মসূচিতে সারাদেশের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল ২০ থেকে ৩০। নাশকতার ভয়ে শতাংশ। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মণিপুর হাই স্কুল, মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ কোথাও কোথাও শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল ২০ শতাংশ। তবে এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে আসার বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়েছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, নাজুক পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের জরিমানা করা হবে না বলেও জানানো হয়েছে।