আজ উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
রাজধানী ঢাকার মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতা ১০ মাস পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে গণপরিবহন হিসেবে মেট্রো রেলের আসল যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ থেকে। এই কয়েক মাস মেট্রো রেল ভ্রমণের খুব শখ ছিল। আজ থেকে এই আধুনিক গণপরিবহনকে শখের দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তবে পরিমাপ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার উত্তরা-মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনি দুপুর ২টায় আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে পৌঁছাবেন। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল মেট্রোরেলে চড়ে। এর মাধ্যমে মতিঝিল পর্যন্ত বাণিজ্যিক মেট্রোরেল যাত্রা শুরু হবে।
মতিঝিলে এমআরটি লাইন-৫ নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে মতিঝিলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন তিনি।
পুরো উত্তরা-মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল চালু হলে এর প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেট্রোরেল সফল হলে সড়কে ছোট বা ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল কিছুটা কমে আসবে।
সেই সঙ্গে জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহারও অনেকাংশে কমে যাবে। ঢাকা মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থায়ও কিছুটা গতি যুক্ত হবে। এতে নগরবাসীর কর্মঘণ্টা বাঁচবে। কিছু কিছু এলাকায় যানজট কমবে। যানজটের কারণে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে।
গত ১০ মাস ধরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত শখের পরিবহন হিসেবে মেট্রোরেল ব্যবহার করা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ যাত্রী প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মেট্রোতে উঠেছিলেন। ১০ মিনিটের ট্রেন যাত্রার জন্য লোকেরা দুই থেকে তিন ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিল। আজ থেকে শেষ হচ্ছে মেট্রোর সেই দিনগুলি। আগামীকাল রবিবার থেকে গণপরিবহনের মতো চলবে মেট্রো।
প্রথম দফায় উত্তরা-আগারগাঁও ট্রেন চলাচল করলেও শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থায় এর কোনো প্রভাব পড়েনি। দ্বিতীয় ধাপে মেট্রোরেল ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকা, মিরপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, পল্টন ও মতিঝিলকে সংযুক্ত করবে। এবার মেট্রোরেলের সরাসরি প্রভাব বোঝা যাবে। এর মাধ্যমে ঢাকার প্রধান গণপরিবহন ব্যবস্থায় যুক্ত হবে মেট্রোরেল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অবকাঠামো ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, ‘মেট্রো রেল আংশিক রুটে চলাচল করায় এতদিন অফিস যাত্রীদের জন্য তেমন আকর্ষণীয় ছিল না। মেট্রো রেলের প্রকৃত সুবিধা বিবেচনা করার সুযোগ গত ১০ মাসে তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, সময় অনেক বেশি হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্বটা আগে চালু হলে ভালো হতো। যদিও এটি আমাদের জন্য নতুন প্রযুক্তি নির্ভর গণপরিবহন। অতএব, আমাদের ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
দ্বিতীয় অংশে প্রাথমিকভাবে তিনটি স্টেশন থাকবে
আগামীকাল রবিবার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো চলবে। তবে প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় পর্যায়েও সব স্টেশন একযোগে চালু হচ্ছে না। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনই এখন চালু রয়েছে। মতিঝিল সেকশনে সাতটি স্টেশন রয়েছে। এই রুটের শুরুতে ট্রেনটি ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে থামবে।
বাকি থাকবে বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন। পর্যায়ক্রমে এসব স্টেশন চালু করা হবে। আবার সকাল সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ট্রেন চলবে মতিঝিল পর্যন্ত। ধীরে ধীরে এ রুটে ট্রেন চলাচলের সময় বাড়ানো হবে। যদিও ট্রেনটি আগারগাঁও পর্যন্ত যেমন চলছিল তেমনই চলবে।
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, প্রথম ধাপের মতোই পুরো রুটটি তত্ত্বগতভাবে চালু করা হবে। যাত্রীদের অভ্যাস গড়ে উঠলে ধীরে ধীরে সময় ও স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রো রেল পুরোপুরি চালু হওয়ায় ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। ছয়টি বগি বিশিষ্ট প্রতিটি একমুখী ট্রেন একবারে সর্বোচ্চ ২,৩০৮ জন যাত্রী বহন করতে পারে।
প্রতিদিন ২০টি ট্রেন চলবে এই রুটে। বিকল্প হিসেবে আরও চারটি ট্রেন প্রস্তুত থাকবে। মাঝখানের চারটি কোচের প্রতিটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৯০ জন। দুই পার্শ্বযুক্ত ট্রেলার কোচের (ইঞ্জিন) সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৭৪ জন। সমস্ত ট্রেনে মহিলা যাত্রীদের জন্য আলাদা কোচ রয়েছে।
কমলাপুর পর্যন্ত ২০২৫ সালে চালু হবে
উত্তরা থেকে কমলাপুরের দূরত্ব ২১.২৬ কিমি। এই পুরো রুটে মেট্রো রেলের ১৭টি স্টেশন থাকবে। প্রথম ধাপে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকশন চালু করা হয়েছে। মতিঝিলের রাস্তা ২০.১০ কিলোমিটার। ২০২৫ সালের মধ্যে কমলাপুরে যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৩ সালে পরিবহণ পরিকল্পনায় মেট্রো যুক্ত করা হয়েছিল।