হানিফ ফ্লাইওভারের ১০ বছর: প্রতি তিন দিনে একজনের মৃত্যু

0

গত ১০ বছরে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভারের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনায় এক হাজার ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪৯৯ জন। এটি মোট মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ।

মঙ্গলবার সেভ দ্য রোড নামের একটি সংগঠনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে ১০ বছরের এই দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন।

সাড়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভারে প্রতি তিন দিনে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। গত এক দশকে সব ধরনের যানবাহনে আট হাজার ৩৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৬ হাজার ৩১২ জন। এ ধরনের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানই দেখিয়ে দেয় রাস্তাটি কতটা বিপজ্জনক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্লাইওভারে যানবাহনের চাপ ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি। যানজট থেকে মুক্তি পেয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। আজ থেকে ১০ বছর আগে ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করা হয়। প্রথম মাসে মাত্র ২১ দিনে এই সড়কে দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

পরের দুই মাসের প্রথম আড়াই মাসে মৃতের সংখ্যা ৩০ ছুঁয়েছে। প্রধান সমস্যা হল সাড়ে ১১ কিলোমিটার ফ্লাইওভারে ১৩টি র‌্যাম্প রয়েছে। প্রতিটি র‌্যাম্পের প্রধান সড়ক যানজটে। ফলে প্রধান সড়ক থেকে ফ্লাইওভারের র‌্যাম্প পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। দিন দিন ফ্লাইওভারে ব্যস্ততা বাড়ছে।

ধারণক্ষমতার চেয়ে যানবাহনের চাপ বেশি। র‌্যাম্পের মুখে বাসের যাত্রীদের আনাগোনা। নিচের রাস্তায় যানবাহন চলাচলের উপযোগিতা কমে যাওয়ায় সব ধরনের যানবাহন ফ্লাইওভারে উঠছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক প্রফেসর মোঃ হাদিউজ্জামান বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি এলাকার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য। কিন্তু এটি এখন একটি অপরিকল্পিত জাতীয় সড়ক করিডোরে পরিণত হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়বে।

সেভ দ্য রোডের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছরে মোট দুর্ঘটনার মধ্যে ২ হাজার ৫৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এতে ৪৯৯ জন মারা যান। যা একটি নির্দিষ্ট গাড়ির জন্য তুলনামূলকভাবে সর্বোচ্চ। এটি মোট মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত দুই হাজার ১২৭ জন।

নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে কাজ করা আরেকটি সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই র‌্যাম্পের সামনে পানি জমে যায়। মোটরসাইকেল অল্প জায়গা রেখে দ্রুত যেতে চায়। এতে আরও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা আরেক সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কখনো কখনো সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম, তার মানে এই নয় যে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। সংগঠনগুলো সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে। তাই সংবাদ কম প্রকাশিত হলে সংখ্যা কমে যায়।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘হানিফ ফ্লাইওভারে বেশিরভাগ সময় যানজটে আটকে থাকে। যাইহোক, এই রাস্তায় এত দুর্ঘটনা দেখে আমি অবাক হয়েছি। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ বোধগম্য না হলেও পণ্য পরিবহনে এত দুর্ঘটনা কেন?

স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, এই উদল সড়কে এত দুর্ঘটনা ঘটছে, উদল সড়কটিও নিচের রাস্তার মতো বেহাল দশায় ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। এ কারণেই দুর্ঘটনার চিত্র এত ভয়াবহ। কোনো দেশের ফ্লাইওভারে কেউ ঝুলে মূল সড়কে প্রবেশ করে না। এখানেও তাই হয়। নিয়মনীতির মধ্যে এগুলোর ব্যবস্থাপনা না হলে দুর্ঘটনা বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *