প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন কাল।দিল্লিতে কথা হবে রাজনীতি নিয়েও ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিসহ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে নয়াদিল্লি যাবেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নরেন্দ্র মোদির সরকারি বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশে চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী বছরের প্রথমার্ধে ভারতেও নির্বাচন হওয়ার কথা। দুই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তাসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের বৈঠকের এক অংশে দুই শীর্ষ নেতা সাধারণত একান্তে কথা বলেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক এতই গভীর ও বিস্তৃত যে এক দেশের যেকোনো ঘটনা অন্য দেশের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তা, শান্তি, স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন দুই শীর্ষ নেতা।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নানা উদ্যোগ নিয়ে নয়াদিল্লির অস্বস্তির খবর এসেছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যত নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নীতির মতো উদ্যোগ নিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আর এই সুযোগে বিরোধীরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে এমন ধারণা নিয়ে নয়াদিল্লির অস্বস্তির কথা জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। গত জুনে নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এ বিষয়ে আলোচনার আভাস পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, ভারতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিরাপত্তা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় নিরাপত্তা খাতে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছিল।
বাংলাদেশ তার ভূখণ্ড ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয়নি। আসাম সহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি এর থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশ তিস্তার পানি বণ্টনসহ বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয় তুলে ধরবে। কিছু আপস হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জি-২০টির সদস্য না হলেও ভারতের আমন্ত্রণে জোটের সম্মেলনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ যিনি বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আগামী শনিবার নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের সামনে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর পক্ষে কথা বলবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অনন্য সুযোগ। এটাও তার একটা বহিঃপ্রকাশ যে ভারত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
নয়াদিল্লি থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী যখন নয়াদিল্লি সফর করবেন, সেখানে ২৫টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের প্রতিনিধিরা থাকবেন। জি-২০ সম্মেলনের আগে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। ফলস্বরূপ বহুপাক্ষিক বিষয়গুলি তাদের আলোচনায় গুরুত্ব পেতে পারে। বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরেরও চেষ্টা চলছে।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক প্রকল্প বা সংযোগ উদ্যোগ উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে এই সফরে তাদের সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কয়েকদিনের মধ্যে আবারও কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করতে দেখা যেতে পারে।
নয়াদিল্লিতে তিন দিনের সফর শেষে আগামী রোববার ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন তিনি ঢাকায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে স্বাগত জানাবেন।