এলসি জটিলতা।আবারও বিপাকে এলপিজি আমদানিকারকরা
দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সরবরাহ করে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। তবে ডলার সংকটের কারণে আমদানির চাহিদা অনুযায়ী লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে না পারায় আবারও সমস্যায় পড়েছেন আমদানিকারকরা। আমদানি ব্যাহত হওয়ায় বাজারে এলপিজি সিলিন্ডারের সরবরাহ নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খুচরা বিক্রেতারা প্রতি সিলিন্ডার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে।
আমদানিকারকরা বলছেন, এলপিজি আমদানির এলসি খোলার সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে বাজারে সংকট আরও প্রকট হতে পারে। এ অবস্থায় আজ রোববার সেপ্টেম্বর মাসের জন্য গ্রাহক পর্যায়ে এলপিজির দাম ঘোষণা করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
এলপিজি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের শুরু থেকেই ডলার সংকট শুরু হয়। অন্যান্য খাতের মতো এলপিজি আমদানিকারকরাও এলসি খুলতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
কয়েক মাস পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও তিন মাস ধরে আবারও ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারছে না।
এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলওএবি) অনুসারে, দেশে ৫৮টি অনুমোদিত এলপিজি সরবরাহকারী কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ২২ থেকে ২৪টি কোম্পানি বাজারে সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে সাত থেকে আটটি কোম্পানি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এলপিজি সরবরাহ করতে পারছে।
আট থেকে দশটি কোম্পানি রেশন ও সরবরাহ করছে। বাকি পাঁচ থেকে ছয়টি কোম্পানি এলসি করার ক্ষমতা হারিয়েছে।
জানতে চাইলে এনার্জিপ্যাকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জি-গ্যাসের বিজনেস হেড আবু সাঈদ রাজা বলেন, তিন মাস ধরে এলসি জটিলতা বড় আকার ধারণ করেছে। ব্যাংকগুলো থাকলে এলসি করতে কোনো সমস্যা হতো না। এমনকি তিন মাস আগেও সীমিত। তারপর আমি এলসি পারফর্মার জমা দেওয়ার ২৪ ঘন্টা থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এলসি স্থানান্তর করতে পারতাম।
এরপর সর্বোচ্চ তিন দিনে এলপিজি পাব। এখন এলসি পারফর্মার জমা দেওয়ার পরে, এলপিজি আসতে ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগছে।
তিনি বলেন, ‘এলপিজি একটি নিত্যপণ্যের মতো। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করতে হবে। এলসি জটিলতার কারণে মজুদকৃত এলপিজি বিক্রি করেও অপারেটরদের আমদানি এলপিজির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে বাজারে এলপিজি সরবরাহে সংকটের পাশাপাশি দামও বাড়ছে।
ওরিয়ন গ্যাস লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) প্রকৌশলী অনুপ কুমার সেন বলেন, কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারের দামের চেয়ে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি চার্জ নিচ্ছে। ব্যাংক ডলারের দাম নিয়ে এলপিজির দাম বাড়ায়।অতিরিক্ত টাকা পরিশোধের কারণে কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।ডলার সংকটের কারণে এলপিজি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী এলপিজি আমদানি করতে পারছে না।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল আমিন বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।
দেশের এলপিজি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাজার শেয়ারের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা প্রকৌশলী জাকারিয়া জালাল বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলপিজি আমদানির এলসিসহ অন্যান্য জটিলতা লাঘব করতে হবে।