বিয়ের দিন দুপুরে মাজহারুলের লাশ পাওয়া যায় মেসে
মাজহারুল (২৪) গত সপ্তাহে কাজ থেকে ছুটিতে এসে পরিবারের সঙ্গে পাত্রী দেখতে পছন্দ করেন। এ অবস্থায় গতকাল শুক্রবার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে কনেকে তুলে নেওয়া হবে। কাজে ফিরে যাওয়া এবং প্যাক আপ করা এবং আগের রাতে বাড়িতে আসা।
কিন্তু তিনি বাড়িতে আসেননি। পরে একাধিক ফোন কলের জবাব না পাওয়ায় অবশেষে শুক্রবার পরিবার সেখানে গিয়ে কর্মস্থলের পাশে ভাড়া মেসে মাজহারুল ইসলামকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।
নিহত মাজহারুল ইসলাম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কাটলিপাড়া মাতারবাড়ি গ্রামের মো. ইব্রাহিমের ছেলে তার চার ভাই ও দুই বোন।
প্রায় দুই বছর আগে তিনি ওয়ালটন কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার কর্মস্থল গাজীপুরের কালিয়াকোরে। সেখানে হাজিরবাড়ি কলোনিতে একটি মেসে ভাড়া থাকতেন তিনি। তার বড় ভাই আনসারুল ইসলাম জানান, গত সপ্তাহে তার ভাই মাজহারুল ইসলাম ছুটিতে বাড়িতে আসেন।
পরে পরিবারের সম্মতিতে তিনি কনে দেখতে উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে যান। সেখানে পাত্রী দেখার পর মাজহারুলের মতামত নিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ছিল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে কনের বাড়িতে গিয়ে কনেকে আনার দিন। এ অবস্থায় মাজহারুল কর্মস্থলে গিয়ে ছুটি নিয়ে একদিন আগে দেশে ফিরবেন। এদিকে বিয়ের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কনের জন্য লাল বেনারসি শাড়ি ছাড়াও সব কিছুতেই করা হয় নানা ধরনের অলঙ্কার ও জিনিসপত্র। এদিকে গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে মাজহারুলও খোঁজ নেন বিয়ের বাজার সব সময় শেষ হয়েছে কি না। রাত ১২টার দিকে মায়ের সঙ্গেও কথা হয় তার। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবেন। পথে গাজীপুরে অবস্থানরত বোনদের সঙ্গে নিয়ে আসবেন। তিনি প্রচুর বাজারজাতও করেছিলেন।
এরপর থেকে তার মোবাইলে কল আসেনি। এভাবে পরের দিন সকাল থেকে মাঝে মাঝে ফোন করা হলেও রিং বাজলেও কেউ সাড়া দেয়নি। এ অবস্থায় পরিবারে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাতে কালিয়াকোড়ের ওই স্থানে একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালালে দেখা যায়, মাজহারুল দুই মাস আগে পুরনো মেস ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন। কিন্তু সঠিক ঠিকানা না পাওয়ায় সারারাত চেষ্টা করেও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। পরে শুক্রবার বিকেলে হাজীবাড়ী কলোনীর একটি মেসের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে মাজহারুলের লাশ বিছানায় ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। তার পা দুটো বিছানার সাথে লাগানো ছিল। পাশে বড় ব্যাগে নিজের জামাকাপড় ছাড়াও আরও বিয়ের বাজার রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
খবর পেয়ে নিহত মাজহারুলের বাড়িতে গিয়ে পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া দেখতে পান। কান্নার রোল বাড়ির চারপাশে পরিষ্কার এবং পরিপাটি। বাড়ির এক জায়গায় সাজানো হয়েছে বিয়ের সব ধরনের সরঞ্জাম। এই গুলি দেখে মা কাঁদছে। কোন পরিমান শান্তনা মাকে বুঝাতে পারে না।