লেবুর চারা থেকে কোটি টাকা আয়
বারি লেবু-৪. বহুবর্ষজীবী গন্ধহীন লেবু। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের কৃষক সামাউল ইসলাম লেবু চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। লেবুর চারা বিক্রি করে বছরে প্রায় কোটি টাকা আয় করছেন তিনি।
সম্প্রতি সমউলের (৫৫) লেবু বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে গুচ্ছ লেবু রয়েছে। এখান থেকে তিনি প্রতিদিন লেবু সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। এছাড়াও প্রতিটি লেবু গাছ কলম করা হয়েছিল। এই ছোট কলম থেকে চারা তৈরি করা হয়। চারা লাগানোর তিন মাসের মধ্যে লেবুর জন্ম হয়। তাই তার লেবুর চারা কিনে অনেকেই বীজহীন বারোমাসি সুগন্ধি বারি লেবু-৪ চাষ করছেন। বাণিজ্যিকভাবে এই লেবু বাগান করে লাভবান হয়েছেন অনেকেই।
সফল কৃষক সামাউল ইসলাম জানান, গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের সহায়তায় তিনি কদমপুর গ্রামে ১৬ একর জমি লিজ নিয়ে তিন বছর আগে বীজবিহীন বারোমাসি বারি লেবু-৪ চাষ শুরু করেন। বাগানে রয়েছে ১২ হাজার লেবু গাছ। তিনি প্রথম বছর থেকেই লেবুর ফলন পেতে শুরু করেন। ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এই লেবুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে তিনি সারা বছরই লেবু বিক্রি করেন। তার বাগানের লেবুর গন্ধ ভালো। লেবুর কোন বীজ নেই। প্রচুর রস আছে। লেবু প্রায়ই সালাদ এবং সিরাপ ব্যবহার করা হয়। এ কারণে বাজারে তার লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এ ছাড়া লেবু গাছের কলম করে চারা উৎপাদন করেন। প্রতিটি লেবু গাছ বছরে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০টি চারা উৎপাদন করতে পারে। প্রতিটি চারা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। বর্ষাকালে পশুখাদ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার, মালয়েশিয়ায় লেবুর চারা বিক্রি করছেন তিনি। তার চারা নিয়ে দেশে অন্তত ৩০টি বাণিজ্যিক লেবুর বাগান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া অনেকেই এখান থেকে লেবুর চারা কিনে বাড়িতে লাগান। লেবু ও চারা বিক্রি করে প্রচুর লাভ করেছেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড.এম এম কামরুজ্জামান বলেন, সামাউল একজন পরিশ্রমী ও মেধাবী সফল কৃষক। তাদের উৎসাহে তিন বছর আগে লেবু চাষ শুরু করেন তিনি। তারা তাকে চারা, সার, ছত্রাকনাশক, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ এম খায়রুল বাশার বলেন, তাদের এ জাতের লেবু গাছের প্রতিটি ডালে গুচ্ছ করে ফল দেয়। এই জাতের একটি লেবু গাছ ৩৬৫ দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ লেবু উৎপাদন করতে পারে। তাই প্রতিদিন একটি গাছ থেকে গড়ে দুটি লেবু সংগ্রহ করা যায়। লেবুর আবাদ করে অনেকেই সামাউলের মতো স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
কদমপুর গ্রামের কৃষক ওবায়দুর রহমান বলেন, সামাউল একজন উদ্ভাবনী ও পরিশ্রমী কৃষক। তিনি কলা, পেয়ারা, মাল্টা, কুল চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। এখন লেবু দিয়ে খেলে। এলাকার অনেক কৃষক তাকে অনুসরণ করে লাভবান হচ্ছেন।