এভাবেও বেঁচে ফেরা সম্ভব!দেড় ঘণ্টা ধরে ৪০ টন ওজনের লরির নিচে আটকা পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচজন

0

উদ্ধারকর্মী, পুলিশ, উৎসুক জনতা—সবাই আতঙ্কে। তারা ফিসফিস করে বলে, এভাবেও বাঁচা যায়! যাঁরা দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা ৪০ টনের লরির নিচে ছিলেন, তাঁদের মাথা ঘোরা এখনও বন্ধ হয়নি। প্রবাসী মোহাম্মদ আবু বক্কর তার স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাসহ প্রাইভেটকারের পাঁচ আরোহীর জীবন বাঁচাতে ঈশ্বরের ‘অলৌকিক’ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেন না, যদিও তিনি ভয়াবহতার পরে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

Description of image

শনিবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের সামনে কন্টেইনারবাহী একটি লরি উল্টে আবু বক্করকে বহনকারী চলন্ত প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দেয়। আবু বকরসহ তার স্ত্রী, দুই মেয়ে আবিদা (১২) ও আদিলা (৬), শ্বশুর মুছা আহমেদ, প্রাইভেটকারের চালক তাদের বাঁচাতে কাঁদতে থাকেন।

মুহূর্তে আশেপাশে অনেক মানুষ জড়ো হলেও তারা নিঃস্ব। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে লরিটি সরিয়ে উল্টে যাওয়া প্রাইভেটকার থেকে পাঁচজনকে উদ্ধার করে। আহত অবস্থায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।

কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র অফিসার সুলতান মাহমুদ চৌধুরী জানান, কন্টেইনার লরিটির ওজন প্রায় ৪০ টন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা ক্রেন দিয়ে লরিটি সরিয়ে প্রাইভেটকারে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করে। বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “দুই শিশুসহ সবাই সামান্য আহত হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চালককে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আসলে এমন দুর্ঘটনায় যেন কেউ বাঁচতে না পারে। আল্লাহ রেখেছেন। তারা জীবিত।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা কার্গো লরিটি মহাসড়কের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজগেট এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্বীপের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এ সময় লরিটি উল্টে একই দিকে চলমান প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। খবর পেয়ে বড় আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশ ও ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় লরিটি সরিয়ে প্রাইভেটকারের যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়।

আহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আবু বক্কর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে শনিবার সকালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাকে আনতে শুক্রবার রাতে মুছা আহমেদ তার মেয়ে ও দুই নাতনিকে নিয়ে একটি প্রাইভেটকারে করে বিমানবন্দরে যান। শনিবার সকালে সবাই ফটিকছড়ির শাহনগর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে দুর্ঘটনার কারণে বাড়ির পরিবর্তে হাসপাতালে যেতে হয়েছে তাদের।

বারো আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান, ভয়াবহ দুর্ঘটনা হলেও চালকসহ পাঁচজন প্রাণে বেঁচে গেছেন। চালককে সামান্য আঘাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লরি ও প্রাইভেট কারটি আটক করা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ লরি চালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।