কোরবানির বাজারে আদা-রসুনের ঝাঁজ
পেঁয়াজের পর এবার রসুনের বাজারে বড় উল্লম্ফন। গত তিন দিনে মসলার দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। সেই সঙ্গে আদা কয়েকদিন কমে আবার বাড়ে। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজে বাজার পূর্ণ হলেও দেশি পেঁয়াজ পৌঁছায়নি।
চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় দাম বাড়ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ ভোক্তারা। তাদের অভিযোগ, ডলার সংকটের পুরো সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া রমজানে বাজারে সরকারের কিছু তদারকি থাকলেও এখন তেমন কোনো তৎপরতা নেই। সামনে কোরবানির ঈদ। তারাও এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আদা-রসুন মজুদ ও আমদানি খরচ সরকার তদারকি করলে দাম কমবে বলে মনে করেন ভোক্তারা। বুধবার হাতিরপুল কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ ও রসুন কেনার পর আবদুল আলী বলেন, এসব বলে কী হবে আর লিখে কী হবে? ডলার নেই- সব কিছুর দাম বেড়েছে। আসল কথা হলো, সামনে ঈদুল আযহা। এ কারণে সবাই সমান দাম নিচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিদিনই এর দাম বাড়ছে দেখছি। কিন্তু সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। বাজারে কোনো অভিযান নেই।
রাজধানীর খুচরা বাজারে তিন দিন আগে আমদানি করা এক কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে প্রায় ১২০ টাকায়। তবে গতকাল কারওয়ান বাজার, মালিবাগ ও হাতিরপুল কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেড়ে যাওয়ার পর রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা। আমদানি করা সাদা রসুন ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। দাম বেড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা হালকা লাল রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। তিন দিন আগেও লাল রসুনের দাম ছিল ১৫০ টাকা থেকে ১৫৫ টাকা।
কয়েক মাস আগে আদার দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫শ টাকা। তবে ধীরে ধীরে দাম কিছুটা কমে আসে। তবে গত তিন-চার দিনে আদার দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজারে সবসময় কমবেশি চায়না আদার সরবরাহ থাকে। কিন্তু দেড় মাস ধরে চায়না আদা খুব কমই দেখা যাচ্ছে। দেশি আদার পাশাপাশি এখন ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, ভিয়েতনাম ও ভুটানের আদার চাহিদা মেটানো হচ্ছে। মানের দিক থেকে এক কেজি ইন্দোনেশিয়ান আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। চার দিন আগেও এই আদা ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি।
আমদানি নিষেধাজ্ঞার অজুহাতে হঠাৎ করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। আমদানির অনুমতি থাকায় প্রতিদিনই পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ দেখা গেছে। খুচরা পর্যায়ে এসব পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও দেশি পেঁয়াজের ঔজ্জ্বল্য সে তুলনায় কমেনি। দেশি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই সময়ে দেশি রসুনের দাম কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া এক বছরে দেশি আদার দাম বেড়েছে ২৫৭ শতাংশ এবং আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে ২৫৩ শতাংশ।
কারওয়ান বাজারের আদা-রসুন বিক্রেতা মো. সুমন বলেন, বাজারে আদা ও রসুনের অভাব নেই। এরপরও তিন দিন ধরে পাইকারি বাজারে রসুনের দাম বাড়ছে। আদার দাম কিছুটা কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার রসুনের চাহিদা সাত লাখ ৫০ হাজার টন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার টন। সে হিসেবে ঘাটতি খুব বেশি নয়।
অন্যদিকে আদার বার্ষিক চাহিদা ৪৬০ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ২ লাখ ২৪ হাজার টন। ফলে দেখা যায়, চাহিদার প্রায় অর্ধেকই আদা আমদানি করতে হচ্ছে। যদিও আমদানিকারকদের দাবি, দেশে আদা-রসুনের চাহিদা বেশি।