তবুও ঢুকছে ভারত মিয়ানমারের গরু  

0

একদিকে কয়েক বছর ধরে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ, অন্যদিকে কোরবানির ঈদে প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি পশুর উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ বছরও চাহিদার তুলনায় ২১ লাখ ৪১ হাজার বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। তবে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিভিন্ন কৌশলে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে গরু-মহিষ ঢুকছে। কিছু সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকলেও বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে বেশি পশু প্রবেশ করছে। কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে, আবার কখনো প্রশাসনের যোগসাজশে গরু আনা হচ্ছে। আর এ কাজের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের একটি চক্র। সমসাময়িক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সীমান্ত এলাকায় সাধারণত বাজার বসিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে এসব চোরাচালান পশু। এসব বাজার থেকে পশু ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কোরবানি উপলক্ষে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসবে না- সরকারের এমন ঘোষণায় আশায় ছিলেন দেশের খামারিরা। এখন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গবাদি পশু এনে লোকসানের আশঙ্কায় তারা হতাশ। যদিও প্রশাসনের দাবি, ভারত ও মিয়ানমার থেকে গবাদি পশুর অনুপ্রবেশ রোধ করা হচ্ছে।

২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখান থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়। চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে গরু পালন বেড়েছে।

আর তাতেই বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ২ লাখ খামার রয়েছে। এবার ঈদুল আজহায় ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯ পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি পশু। সে অনুযায়ী চাহিদার তুলনায় ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। সীমান্তের কড়াকড়ির কারণে কয়েক বছর ধরে ঈদে পশু আসেনি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজারের রামু, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক পশু প্রবেশ করেছে। এসব পশুর বেশির ভাগই রামুর গর্জনিয়া ও কচ্ছিয়া ইউনিয়ন ও চকরিয়ার বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে। এমনকি মিয়ানমার থেকে আসা পশুর বাজারও ওই এলাকায় অবস্থিত। প্রতিটি গরু-মহিষ মিয়ানমার থেকে ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনে বিক্রি হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। ৮ জুন নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি পৃথক অভিযান চালিয়ে ৪০টি মিয়ানমারের গরু জব্দ করে।

লামার চাষি আবদুস সাত্তার ও এশাহসান উল্লাহ জানান, মিয়ানমার থেকে গৃহপালিত পশু আসায় চাহিদা ও দাম কমেছে। তাই এক থেকে দেড় বছর পশু পালনের পর বিক্রি করলে লাভের মুখ দেখতে পান না খামারিরা।

কক্সবাজারের ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রামারকুলে গড়ে উঠেছে অবৈধ গরুর হাট। শাসক দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা বাজারটি পরিচালনা করেন। প্রশাসনের যোগসাজশে পরিচালিত এ বাজারের ক্রেতা সাধারণ মানুষ হলেও বিক্রেতারা চোরাকারবারি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা বাজার দেখাশোনার একজন।

শুধু ঈদগড় ইউপি সদস্য রুস্তম আলীর নেতৃত্বে গত কয়েক মাসে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে কক্সবাজারের রামুর ঈদগড় দিয়ে ১০ হাজার গরু পাচার হয়েছে। একটি চক্র নাইক্ষ্যনছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তের ফুলতলী, ভল্লুকখাইয়া, জারুলিয়াছড়ি, জামছড়ি, দোছড়িসহ ৮টি পয়েন্ট থেকে গরু এনে গর্জনিয়া বাজারের আশেপাশে বা কচ্ছিয়া ইউপির বিভিন্ন স্থানে রাখছে এবং ইজারাদারদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে রশিদ হাতিয়ে নিচ্ছে। সেগুলো কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

কুমিল্লার বিশাল এলাকা জুড়ে ভারতীয় সীমান্ত। এ ছাড়া প্রতিবেশী জেলার সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। এ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পশু প্রবেশ করছে। সূত্র জানায়, কুমিল্লা অঞ্চলের মাহবুব নামের এক ব্যবসায়ী প্রতিদিন ৩০০-৩৫০টি গরু বিনিময় করেন। সে উখিয়ার একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। কুমিল্লার কৃষক ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা পশু পালন করি এবং প্রতি বছর একটি ঈদের স্বপ্ন দেখি। আর অবৈধভাবে ভারতীয় গরু এনে আমাদের স্বপ্ন চুরমার করা হয়েছে।

সিলেটের সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে গরু আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তের ১২৬০ নম্বর পিলার সংলগ্ন দমদমা ড্রেন দিয়ে গরু ঢুকছে। পরে তারা গোয়াইনঘাট এলাকার ভিটনরগুল ও বিছনাকান্দি হয়ে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে যান। দিনের বেলায় ভারতের খাসিয়া নাগরিকরা তাদের গরু কাঁটাতারের বেড়ার পাশে একটি নির্জন এলাকায় রাখে। রাতের আঁধারে কাঁটাতারের নিচে বাংলাদেশে পাচার করা হয়। এ ছাড়া সিলেটের জৈন্তাপুর ও কানিঘাট সীমান্ত দিয়ে পশু প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম ফটিকছড়ির সবচেয়ে বড় পশুর হাট ভারতীয় সীমান্তে ফেনী নদীর পাশে বাগান বাজারে অবস্থিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *