চালু কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০০০ মেগাওয়াটে বাড়ানোর পরিকল্পনা
সোমবার দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এতে সারাদেশে চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার চালু হওয়া কেন্দ্রগুলোতে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে জ্বালানি সংকটের কারণে সরকারের পরিকল্পনা তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। সরবরাহ ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। তবে খাত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, লোডশেডিং পৌঁছেছে ৩ হাজার ২১৫ মেগাওয়াটে। কিন্তু বাস্তবে এর পরিমাণ বেশি বলে জানান বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা। এদিকে পায়রার বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে পিডিবি। রোববার রাত থেকে লোডশেডিং বেড়েছে। খোদ রাজধানীতেই ৬-৭ ঘণ্টার লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামের অবস্থা শোচনীয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল জরুরি বৈঠক করেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংকট মেটাতে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আরও বিদ্যুৎ কেনা হবে। ভারতের আদানি গ্রুপ এখন ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। কখনও কখনও এটি এমনকি ৯০০ মেগাওয়াট। সরকার আদানি থেকে ১০৫০ মেগাওয়াট নিতে চায়। রামপাল কেন্দ্র এখন ৩২০ থেকে ৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। বৈঠকে তা বাড়িয়ে ৬১২ মেগাওয়াট করার কথা রয়েছে। তবে রামপালের একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়লার ঘাটতির কারণে প্ল্যান্টটি তার ধারণক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদন করছে, যা চলবে মাত্র ১২ দিন। নতুন কয়লা না আসা পর্যন্ত উৎপাদন বাড়ানো যাবে না। রামপাল কর্তৃপক্ষ কয়লা কিনতে সরকারের কাছে ডলার চেয়েছে। এস আলম গ্রুপের কয়লাচালিত ১৩৫০ মেগাওয়াট প্ল্যান্টটি ২০০ মেগাওয়াটের পাইলটিং করছে। সরকার তা বাড়িয়ে ৩২০ মেগাওয়াটে করতে চায়। তবে সূত্র জানায়, কারখানায় দুই দিন চালানোর মতো পর্যাপ্ত কয়লা রয়েছে।
সরকার আরেকটি পরিকল্পনার কথা ভেবেছে। অর্থাৎ ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, টঙ্গী, ভেড়ামারা, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বৃদ্ধি করা। তবে পেট্রোবাংলা বলছে, প্রতিদিন ১২ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর বেশি টাকা দিলে শিল্পে চাপ পড়বে।
গ্যাস ও কয়লা ছাড়াও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক প্ল্যান্টের উৎপাদন বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার। এ কারণে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) তেল সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বিপিসি বলছে দ্রুত তেল সরবরাহ বাড়ানো কঠিন।