সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্র।২৫ জেলায় প্রধান শিক্ষক নেই।
এর প্রধান কারণ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের ফিডার পূর্ণ না হওয়া
এটা সাধারণত স্বীকৃত যে দেশের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলো ভালো মানের শিক্ষা প্রদান করে। কারণ মানসম্মত শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে! কিন্তু বাস্তবের সাথে এই ধারণাগুলোর সমন্বয় করা কঠিন। এসব বিদ্যালয় এখন চলছে ধীরগতিতে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। সিলেট ও বরিশাল বিভাগে কেউ নেই। পুরো খুলনা বিভাগে মাত্র একজন প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। তিনি খুলনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফারহানা নাজ। এ বিভাগের ১০টি জেলার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, নতুন জাতীয়করণসহ সারাদেশে মোট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৮৩টি। এর মধ্যে সব বিদ্যালয়ে এখনো সরকারি পদ সৃষ্টি হয়নি। আবার অনেক স্কুলে শূন্যপদ রয়েছে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৫১টি প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ২৬২টি। মাত্র ৮৯ জন প্রধান শিক্ষক দিয়ে সারাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে।
বাধ্য হয়ে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সিনিয়র শিক্ষক যেখানে সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রধান শিক্ষকই নয়, সহকারী প্রধান শিক্ষকেরও বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম চলছে ঐক্যবদ্ধভাবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আরও কিছু শিক্ষক অবসর নেবেন। এতে শূন্যপদের সংখ্যা আরও বাড়বে।
জানা গেছে, যে ২৫টি জেলায় প্রধান শিক্ষক নেই সেগুলো হলো- যশোর, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ী, শেরপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝালকাঠি, নওগাঁ, নওগাঁ, পিরোজপুর। , পটুয়াখালী, মেহেরপুর, ভোলা, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই সেখানে প্রশাসনসহ নানা কাজে জটিলতা রয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ায় অনেক বিদ্যালয়ে নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক শিক্ষক তাদের কথা মানতে চান না। এ ছাড়া প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে। কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মতে, মাউশি সরাসরি প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করতেন। ২০০৫ সাল থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই পদে কোনো নিয়োগ না হওয়ায় ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তিসহ অন্যান্য কাজেও দুর্নীতি বেড়েছে। এ ব্যাপারে মাউশির খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক এএসএম আব্দুল খালেক জানান, খুলনা জেলায় একজন মাত্র প্রধান শিক্ষক থাকলেও অন্যান্য বিদ্যালয়ে যে কার্যক্রম চলছে তা নয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ের দায়িত্বে সহকারী প্রধান শিক্ষকরা কাজ করছেন। তবে একজন প্রধান শিক্ষক থাকলে প্রতিষ্ঠানটি আরও ভালোভাবে চলতে পারত।
জানা গেছে, এত বেশি সংখ্যক প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হওয়ার মূল কারণ সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদের ফিডার পূর্ণ না হওয়া। ফিডার অবস্থান সম্পূর্ণ করতে পাঁচ বছর সময় লাগে। প্রধান শিক্ষকের পদটি শেষবার ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পদোন্নতি হয়। ফলে দেশে বর্তমানে ৪২১ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকলেও তাদের ফিডার পদ পূরণ হচ্ছে না এবং পদোন্নতিও হচ্ছে না। প্রশাসনিক প্রয়োজনে কিছু কর্মরত প্রধান শিক্ষককে সমমানের জেলা শিক্ষা অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়ায় পদটিও শূন্য হয়ে পড়ছে।
এ প্রসঙ্গে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. ইনশান আলী বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক না থাকায় এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। কারণ, প্রধান শিক্ষক শুধু ওই নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের জন্য নয়, পুরো এলাকার সঙ্গে জড়িত। ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন তদন্ত করেন। বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রেও তিনি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মোঃ গোলাম ফারুক বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্যতায় আমরা ভুগছি। দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী প্রধান শিক্ষকরা। তবে আশার কথা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফিডার পোস্টকে প্রধান শিক্ষকের পদে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি হয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হবে। পদোন্নতি দেওয়া হলে শূন্যপদ কমে যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) মো. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, সরকারি গণমাধ্যমে প্রধান শিক্ষক সংকট আমাদের নজরে এসেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।