আলুর বড় মজুত, দাম বাড়ছে
“মার্চ-এপ্রিল মাসে আমি ছয় হাজার বস্তা আলু কিছু ফ্রিজারে মজুদ করেছি। বাজারে এর দাম বেড়েছে। কিন্তু এখনও একটি বস্তা বিক্রি করিনি। শেলফ লাইফও দীর্ঘ। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়। কথাগুলো বলছিলেন জয়পুরহাটের আলু ব্যবসায়ী মিঠু ফকির।তার মতো আরও অনেকে একযোগে মজুত করেছেন।
এক কেজি কার্ডিনাল অ্যান্ড স্টিক (লাল) আলু ১৭-১৮ টাকা, হীরা (সাদা) ১৮-১৯ টাকা, দেশি পাকরি (লাল) ২১-২২ টাকা এবং রুমানা (পাকড়ি) ২০ টাকায় এক মাস আগে বিক্রি হয়েছিল। বাজার শনিবার সদরের নতুন ও পুরাতন বাজার, কালাই পৌর বাজার ও পুনটের হাটে লাল আলু বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, হীরা ৩৮ টাকা, দেশি পাকড়ি ৪০ থেকে ৪২ টাকা এবং রুমানা ৪০ টাকায়। দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত।
শনিবার কালাই হাটে আসা কৃষক আব্দুর রহমান, আব্দুল জলিল, কফিল উদ্দিন, জাহিদুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন আগে তারা এক কেজি আলু ১৯ থেকে ২০ টাকায় কিনেছিলেন। এখন ৪০-৪২টাকায় কিনতে হবে।
কিন্তু ব্যবসায়ীরা মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি আলু কিনেছেন সাড়ে ১১ থেকে ১৩ টাকা। রেফ্রিজারেটরের ভাড়া সহ মোট খরচ ১৫-১৬ টাকা। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জয়পুরহাটের হিমাগারে মার্চ-এপ্রিল মাসে ৬৫ কেজি ওজনের ২০ লাখ বস্তা আলু মজুদ করা হয়েছে। পাঁচটি উপজেলার ১৬টি হিমাগারে উৎপাদনের ৯৩ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়। প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৫ নভেম্বর।
ব্যবসায়ী ও হিমাগারের ব্যবস্থাপকরা জানান, গত বছর ১৬টি হিমাগারে ২১ লাখ বস্তা আলু মজুদ ছিল। গত মে মাসে এক কেজি কার্ডিনাল ও স্টিক (লাল) আলু ৭-৮ টাকা, হীরা (সাদা) ৮-৯ টাকা এবং দেশি পাকড়ি (লাল) ১০-১২ টাকায় বিক্রি হয়। স্টক একই থাকলেও এবার দাম বেড়েছে চার-পাঁচ গুণ।
চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেশি লাভের আশায় আলু কাটছেন না ব্যবসায়ীরা। দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে বলে অভিযোগ মালিক, খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের। তাদের দাবি, কারসাজি করেই এই সংকট তৈরি করেছে ব্যবসায়ীরা। কম আলু উত্তোলন করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাম বাড়াচ্ছেন তিনি। টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
জয়পুরহাট পৌর বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোফছের আলী জানান, আলু ফ্রিজারে থাকলেও বিক্রি হচ্ছে না। তা না হলে প্রতি ব্যাগ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি দিলে ঠিকই পেয়ে যাবেন। কালাই হাটের বিক্রেতা মাসুদ জানান, শনিবার পুনট হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবারের তুলনায় প্রতি বস্তার দাম ৩৭০-৪২০ টাকা বেশি। এ কারণেই তিনি ফিরে আসেন। বাজারের দিনেও তার দোকানে আলু নেই।
যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, মজুদের সঙ্গে দামের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে হিমাগার মালিকরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা কেন আলু তুলছেন না তা তারা জানেন না। সরকার উদ্যোগ নিলে এবং ব্যবসায়ীদের তালিকা মনিটরিং করলে বাজার অস্থিতিশীল হবে না।
শনিবার কয়েকটি বাজারে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকের ঘরেই আলু রয়েছে। আর ১৬টি হিমাগারে দেখা গেছে, মৌসুমের শুরুতে মার্চ-এপ্রিল মাসে গড়ে ২০ লাখ বস্তা আলু মজুদ করা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত গড়ে এক লাখ ৪০ হাজার বস্তা খালাস হয়েছে, যা মজুদের মাত্র সাত শতাংশ।
ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া জানান, টাকার অভাবে মজুদ করতে পারছেন না। এখনও কেনাকাটা। যে দামে কিনবেন, দু-এক টাকা পেয়ে মহাজনদের কাছে পাঠাবেন। যারা মজুদ করেছেন এক মাসের মধ্যে তাদের দ্বিগুণ লাভ হবে। এখনো বিক্রি হচ্ছে না। তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়। হাবিবুল হাসান নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, দাম বাড়ার পরও ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন না, তাহলে দাম বাড়বে না কেন?
সরাইলের এম ইসরাত কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক রায়হান উদ্দিন জানান, বেশি লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করছেন না। প্রত্যাহারের সময়সীমা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এটিও কারণ হতে পারে। সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় জানান, আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার কথা শুনেছেন, কিন্তু এক সপ্তাহে দ্বিগুণ হয়েছে তা তারা জানেন না। তিনি বলেন, যেসব ব্যবসায়ী কারসাজি করছেন তাদের তালিকা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী জানান, জেলায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও জোরদার করা হবে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।