খাতুনগঞ্জে অস্থির পেঁয়াজের বাজার।টাকা কারসাজির কারণে তিন দফায় প্রতি কেজি ৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছে
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে তিন গুণ বেড়েছে ৪০ টাকা। এখন খুচরা বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। কিন্তু এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেও এক কেজি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনতে পাওয়া যায়। অভিযোগ রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। তবে পেঁয়াজের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার পরও প্রশাসন নীরব।
ক্যাব সংশ্লিষ্টদের মতে, সিন্ডিকেট করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় সরবরাহ ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে দামও বাড়ছে। আমদানি ছাড়া দেশি পেঁয়াজ দিয়ে বাজার সামাল দেওয়া অসম্ভব।
এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে চিন্তিত বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়। দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সংস্থা দুটি। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক মাসে শুধু দেশি পেঁয়াজের দাম ৮৬ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের ঘাটতি থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে ভিন্ন কথা। এই সরকারি সংস্থার মতে, গত চার বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১৩ লাখ টনের বেশি। কিন্তু বাজারে উৎপাদনের কোনো প্রভাব নেই। উল্টো দাম বাড়ছে। বাড়তি মুনাফা পেতে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। এমতাবস্থায় বাজারে সংকট আছে কি না বা সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কি না তা জানতে বাজার তদারকির ওপর জোর দিয়েছেন ক্যাবসহ সাধারণ ক্রেতারা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হলে দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কয়েক বছর ধরে হঠাৎ করে কয়েক দফা পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে খাতুনগঞ্জের একাধিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় প্রশাসন। সরকার ১৫ মার্চ থেকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ করে দেয়। সে কারণেই বর্তমানে পুরো চাহিদা মেটানো হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও দাম চড়া। এখন পাবনা, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া থেকে পেঁয়াজ আসছে খাতুনগঞ্জে।
এ বিষয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা কয়েক টাকা আয়ের জন্য কমিশনের ভিত্তিতে ব্যবসা করেন। পেঁয়াজ একটি পচনশীল পণ্য। খাতুনগঞ্জে মজুদ করার ব্যবস্থা না থাকায় খাতুনগঞ্জে পচনশীল পণ্য। তাই পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজির কোনো সুযোগ নেই।তবে কেউ কারসাজি করছে না এটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।এ ক্ষেত্রে বড় ব্যবসায়ী ও পেঁয়াজের উৎপত্তিস্থলের কেউ জড়িত থাকতে পারে।কিছু আমদানিকারকও সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।
খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কাজী স্টোরের মালিক জাবেদ ইকবাল বলেন, “বাজারে যে পরিমাণ পেঁয়াজ সরবরাহ করা হচ্ছে চাহিদার তুলনায় কম। এ কারণে ক্রমশ দাম বাড়ছে। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম যা। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এখন ৭০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে, ৩০ টাকার কাছাকাছি হওয়া উচিত। দেশের যেসব জায়গা থেকে পেঁয়াজ আসছে সেখানকার কারসাজির সঙ্গে ব্যবসায়ী, বিক্রেতা ও মিল মালিকরা জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত।
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, “অসাধু ব্যবসায়ীরা সব সময় অজুহাত ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। অতীতেও এর বেশ কিছু প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদিত হচ্ছে।বাজারে সরবরাহও ভালো।সরকার কৃষকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণা করার পর প্রায় দেড় মাস পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক ছিল।বাজারে তখনও দেশি পেঁয়াজ। কয়েকদিনের ব্যবধানে ৭০ টাকার ওপরে দাম বেড়েছে।তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জুন শেষে কোরবানির ঈদ। ঈদে চাহিদা বেড়ে যাওয়াকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। কয়েক দফা দাম বাড়ানোর পরও সরকারি সংস্থাগুলো নীরব। ভোক্তারা মূল্য পরিশোধ করছেন।
চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী বাজারে বাজার করতে আসা শ্রমিক কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ভালো মানের পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজিতে কিনেছিলাম, সেই পেঁয়াজ এখন ৮০ টাকা চাচ্ছে, এটা কারসাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। আরেক ক্রেতা আমির হোসেন বলেন, ঈদুল ফিতরের পরও পেঁয়াজ কিনেছি মাত্র ৩৫ টাকায়।