ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে শনিবার রাতে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আজ বৃহস্পতিবার দিক পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বাধিক স্থায়ী গতিবেগ ৫০ কিমি/ঘন্টা দমকা বা ঝড়ের মতো আকারে ৬০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপের আশেপাশে মহাসাগরগুলি রুক্ষ।
এদিকে গভীর নিম্নচাপটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গভীর সমুদ্র থেকে সব জাহাজকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটি আগামী শনিবার রাত থেকে রবিবার সকালের মধ্যে কক্সবাজার বিশেষ করে সেন্ট মার্টিনের নিম্নাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সর্বশেষ বিশেষ আবহাওয়া বুলেটিনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১,৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১,৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১,৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১,৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ছিল।
এটি আজ বৃহস্পতিবার উত্তর-উত্তরপশ্চিমে ঘণীভূত হতে পারে এবং পরে দিক পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বাধিক স্থায়ী গতিবেগ ৫০ কিমি/ঘন্টা দমকা বা ঝড়ের মতো আকারে ৬০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপের আশেপাশে মহাসাগরগুলি রুক্ষ।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে চলাচলকারী সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতেও বলা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য কোনো সতর্কবার্তা নেই।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশের আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। তবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
তাপপ্রবাহ: রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর, নীলফামারী ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রা: সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। শনিবারের পর থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে। মঙ্গলবারের পর বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হলে রোববার বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূল অতিক্রম করতে পারে। রোববার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র বাংলাদেশের অংশে আঘাত হানতে পারে। এর অগ্রবর্তী প্রান্তটি আরও ১২ ঘন্টার মধ্যে ল্যান্ডফল করবে।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে বুধবার সন্ধ্যায় এটি একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আর তখন এর নাম হবে ঘূর্ণিঝড় মওকা। তিনি বলেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এটি একটি ‘সুপার সাইক্লোন’ হতে পারে।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি সভায় তিনি বলেন, আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত। প্রতিবারের মতো ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে পারব। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে। এটি একটি সুপার সাইক্লোন হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এটি ১৩ মে রাত থেকে ১৪ মে সকালের মধ্যে আঘাত হানতে পারে। এটি বাংলাদেশের কক্সবাজারে আঘাত হানতে পারে। বিশেষ করে সেন্ট মার্টিনের নিচু এলাকাগুলো আঘাত হানতে পারে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নগদ ২০ লাখ টাকা, চাল ও শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গভীর সাগর থেকে সব নৌযানকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।