রাজধানীতে পানির তীব্র সংকট

0

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই রাজধানীতে পানির সংকট রয়েছে। দিনে দিনে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দিনের পর দিন অনেক এলাকায় পাইপলাইনে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। গাড়িতে করে অতিরিক্ত দামে পানি কিনে দিন পার করছেন ভুক্তভোগীরা। সেই পানির জন্যও টাকা দিতে হবে। যেসব এলাকায় পানি কম-বেশি পাওয়া যায় সেখানে পানির মান ভালো নয়। অনেক ক্ষেত্রেই ময়লা-দুর্গন্ধ। দক্ষিণ সিটি এলাকায় এ সংকট বেশি। তবে ঢাকা ওয়াসার দাবি, পানির কোনো অভাব নেই।

প্রয়োজনীয় ও নিরাপদ পানির জন্য আলোচনায় আসা জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা ওয়াসার এমডিকে শরবত খাওয়ানোর চার বছর পরও জুরাইন এলাকার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। জুরাইনের ঋষিপাড়া, কুসুমবাগ, পুকুরপাড়া, নবীনবাগ, চেয়ারম্যান বাড়িসহ ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক এলাকা এখনো পানি পাচ্ছে না। আগে পানিবিহীন এলাকার সংখ্যা ছিল খুবই কম। এখন অবস্থা আরও খারাপ। যে পানি পাওয়া যাচ্ছে তার মান ভালো নয়।

তিনি বলেন, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে বসানো ওয়াসার গভীর নলকূপ থেকে মানুষ পানি কিনছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি থেকেও দুবার নলকূপের পানি পরীক্ষা করেন তিনি। প্রতিবার পানিতে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানান, মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের ১, ২ ও ৩ নম্বর সড়কের শতাধিক ভবনে ঠিকমতো পানি পাচ্ছে না। রামপুরা বাঁশ্রীর ৮ নম্বর রোড, ৮ নম্বর রোড, ডি ব্লকের রেডিয়েন্ট কৃষ্ণচূড়া ভবনের বাসিন্দা মীর আবদুল আলিম অভিযোগ করেন, তিন দিন ধরে পাইপলাইনে পানি নেই। সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কাজ হচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানান, তিন দিন ধরে গোসলের ও খাবার পানি নেই। ওয়াসা ছাড়াও স্থানীয় সরকার বিভাগের (ওয়াসার সাপ্লাই উইং) অতিরিক্ত সচিব খায়রুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি।

মগবাজার চেয়ারম্যান গলির বাসিন্দা নাজনীন আহমেদ বলেন, পাঁচ বছর ধরে এ এলাকায় বসবাস করছি। এর মধ্যে কয়েকদিন ধরে পানির সমস্যা ছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে লাইনে পানি আসছে না।

মাতুয়াইলের ডোগাইর এলাকার মাজার রোডের বাসিন্দা মোস্তফা জানান, কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় পানি নেই। ওয়াসার পাইপলাইন ফেটে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে শুনেছি। তাই গভীর নলকূপ বসানো আছে এমন জায়গা থেকে পানি কিনে পানি সংগ্রহ করে তাদের দৈনন্দিন কাজ করতে হয়।

দয়াগঞ্জ মোড়ের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন ধরে তার বাড়িতে পানির সমস্যা চলছে। রাতে একবার আসে দেড় ঘণ্টার জন্য। সেই পানি নিয়েই সারাদিন কাটাতে হয়। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী বেগমগঞ্জ ও স্বামীবাগ এলাকার কয়েকটি বাড়িতে এক সপ্তাহ ধরে পানি নেই।

মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দারা দুই মাস ধরে বাড়িতে পানি সরবরাহ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওয়াসার হেল্পলাইনে বারবার কল করলেও কেউ ধরেননি। তারা জানান, ওই এলাকায় ওয়াসার প্রধান পানির পাম্প নষ্ট হয়ে গেছে। সরবরাহকারীর অফিসে বারবার ধর্না দিয়েও সুরাহা হয়নি। স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী রফিক আহমেদ জানান, বাড়িতে পানি না থাকায় বাধ্য হয়ে ওয়াসার গাড়ি থেকে পানি কিনতে ৪০০ টাকার পরিবর্তে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পানির ট্রাক সময়মতো আসছে না।

এ ছাড়া রাজধানীর স্বামীবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, কুড়িল, ভাটারা, রূপনগর, কালাচাঁদপুর, মিরপুর, আগারগাঁও, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর, আদাবর, উত্তরাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি সংকট দেখা গেছে। এই এলাকায় কয়েক দিন ধরে. . কোনো কোনো এলাকার পানিতে ময়লাও পড়ছে বাসিন্দাদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উত্তরার তুরাগ, কামারপাড়া, ফুলবাড়িয়া, বটতলায় প্রায় ১৫ দিন ধরে পানির সমস্যা চলছে। তারা জানান, দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পানি আসে।

তবে ঢাকা ওয়াসার মুখপাত্র মোস্তফা তারেক দাবি করেন, তাদের পানির কোনো সংকট নেই। ঢাকা ওয়াসা প্রতিদিন ২৬৫ মিলিয়ন লিটার পানি উৎপাদন করছে, যা চাহিদার তুলনায় কম নয়। তাই পানির কোনো অভাব হবে না। তবে দু-একটি জায়গায় পকেটের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যেখানে গাড়ি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ ঢাকা ওয়াসার কল সেন্টারে গাড়িতে করে পানি সরবরাহের চাহিদার কথা জানাচ্ছেন। সেই চাহিদা অনুযায়ী পানি দিতে পারছে না ওয়াসা। প্রতিদিন গড়ে ১,৫০০ গাড়ির চাহিদার বিপরীতে ১০০০টিরও কম যানবাহন পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। বাকি গ্রাহকরা পানি থেকে বঞ্চিত। কর্মকর্তার মতে, পানির স্তর নেমে যাওয়া, লোডশেডিং এবং জেনারেটরের স্বল্পতার কারণে পানির উৎপাদন কমেছে। কিন্তু উৎপাদনের পানির ৬৬ শতাংশ আসে গভীর নলকূপ থেকে। এ কারণে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *