ঈদ ভ্রমণ এখনও স্বস্তিদায়ক, চাপ বাড়বে আজ

0

যানবাহনের চাপ বাড়লেও বুধবার রাত পর্যন্ত কোনো মহাসড়কে যানজট ছিল না। কোথাও কোথাও গতি কম থাকলেও স্থবিরতা ছিল না। তবে বৃহস্পতিবার গার্মেন্টস ও কারখানা ছুটির পর যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এ উপলক্ষে ঢাকায় চলাচলকারী লোকাল বাস, যাত্রীবাহী যানবাহন মহাসড়কে ভেঙে পড়লে বিগত বছরের মতো দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে রেলেও গতকাল পর্যন্ত ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ছিল। টিকিট ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও ট্রেনে ভিড় নেই। বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে।

বাস মালিক ও শ্রমিকদের মতে, এ বছর যাত্রী কম। তাদের মতে, প্রচণ্ড গরম, লোডশেডিং ও অর্থনৈতিক সংকটে অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ফেসবুকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ১২ লাখ ২৮ হাজার ২৭৮টি সিম ছেড়েছে।

গত ঈদুল ফিতরের আগের চার দিনে ৭৩ লাখ সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। ঈদের ছুটির প্রথম দুই দিনে ৩ মিলিয়ন এবং পরের দুই দিনে ৪৩ লাখ সিম ব্যবহারকারী রাজধানী ছেড়েছেন। ২০২১ সালের ঈদুল আজহায় ১ কোটি ৫ লাখ সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছিলেন। যদিও সিমের সংখ্যার আওতাভুক্ত ছাড়া প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না, একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে। এতে বলা হয়, এবার গ্রামের দিকে যাত্রী কম।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শনিবার ঈদ হওয়ার কথা রয়েছে। শুক্রবার থেকে ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার শেষ কার্যদিবস হওয়ায় সরকার নির্বাহী আদেশে বুধবার ছুটি ঘোষণা করে। ধাপে ধাপে ঢাকা ছাড়ার সুযোগ পেয়েছেন যাত্রীরা। ঈদের আগে চারদিন ছুটি থাকায় গত বছর ঈদ ভ্রমণ ছিল স্বস্তির। ছুটি কমে যাওয়ায় কোরবানির ঈদে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এবার দুর্ভোগ এড়াতে ছুটি বাড়িয়েছে সরকার।

মহাসড়কের গতকালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ছুটির পরিমাণ বেড়েছে। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ অংশ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা অংশ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

গতকাল বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর তিনটি টার্মিনালে তেমন যাত্রীর চাপ ছিল না। গাবতলী টার্মিনালে দেখা যায়, চালকের সহকারীরা যাত্রী উঠাচ্ছেন। ঝিনাইদহ লাইনের ব্যবস্থাপক কবির হোসেন জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে খুলনা ও বরিশালের বাস চলাচল করছে। এতে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে চাপ কমেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাড়ি সহজেই পদ্মা নদী পার হতে পারে।

এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপক আতিকুল আলম জানান, মহাখালী টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস যথারীতি দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় যানজটপূর্ণ গাজীপুর পার হতে পারে। সায়েদাবাদ থেকে চলাচলকারী সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালী বাসের শ্রমিকরা জানান, নারায়ণগঞ্জে যানজট না থাকায় ঈদযাত্রা এখনো স্বস্তিদায়ক।

উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পথে যমুনার তীরে বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পাশে এলেঙ্গায় যানজটের আশঙ্কা ছিল। টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, যানবাহনের চাপ বাড়লেও যানজট নেই।

মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৩০ হাজার ২৫১টি যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু অতিক্রম করেছে। টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ২১ হাজার ৫৫০ টাকা। সেতু দিয়ে উত্তরবঙ্গে ১৭ হাজার ২৫৬টি যানবাহন চলাচল করেছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল এ তথ্য জানান। তবে দিনভর বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজায় হাজার হাজার মোটরসাইকেলের দীর্ঘ লাইন ছিল।

কালিয়াকোর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কালিয়াকোর চন্দ্রায় প্রতিবছরই অসহনীয় যানজট লেগে থাকে। এবার চন্দ্রার ত্রিমোর এলাকায় ভিড় বাড়লেও স্থবিরতা নেই। উত্তরবঙ্গগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস পরিবহনের যাত্রী আবু মঈদ বলেন, ঢাকার পর আর কোনো যানজট নেই। গতকাল ত্রিমোর চন্দ্র পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (হাইওয়ে) শাহাবুদ্দিন খান। তিনি বলেন, ধাপে ধাপে কারখানা বন্ধ হলে যানজট থাকবে না। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যাত্রীর চাপ বাড়বে। এটি মোকাবেলায় হাইওয়ে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। যানজট ঠেকাতে মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে রংপুর পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক উন্নয়নের কারণে সিরাজগঞ্জে দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে কামারখন্দের কাশেম মোড়ে ছিল ধীরগতি। পুলিশের তৎপরতায় এক ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

নাভানা গ্রুপের সহকারী ব্যবস্থাপক এইচএম তৌহিদুজ্জামান জানান, ঢাকার কল্যাণপুর থেকে মাত্র চার ঘণ্টায় বাসে করে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটে পৌঁছান তিনি। কোথাও যানজট ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *