পাহাড়ে কমছে পর্যটক
সাজেক, নীলগিরি, আলী কদমে হাত তুলে মেঘ ছুঁতে পারে। রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুটি যেন দুই পাহাড়ের মাঝে খেলা করছে। মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক হ্রদ, শিলাপ্রপাত, চিম্বুক বা তামাটুঙ্গির সৌন্দর্যও পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর সঙ্গে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। জীবনের এই রূপ ও প্রকৃতির রঙ উপভোগ করতে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে আসেন। কিন্তু এবার ছন্দপতন হয়েছে। পাহাড়ে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। পর্যটক কমছে। এ খাতে আয়ও কমছে।
বান্দরবানে দুই পক্ষের মধ্যে সর্বশেষ সংঘর্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। রাঙামাটি সরকারি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, বান্দরবানে জঙ্গি তৎপরতার কারণে কয়েকটি উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। রাঙামাটিতে তেমন কোনো ঘটনা না ঘটলেও পর্যটন খাতে এর প্রভাব রয়েছে। ১৫ মার্চ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করার সময় বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজি বলেন, “থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই উপজেলাগুলো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় অভিযান চালানো হয়। ওই তিন উপজেলায় জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও রোয়ানছড়িতে রক্তপাত বন্ধ করা যাচ্ছে না।
গত ১৫ মার্চ জেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তিতে বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় বিদেশি পর্যটকদের এ সময় ভ্রমণ না করতে সতর্ক করা হয়েছে। এর আগেও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ১১ ডিসেম্বর থানচি, রুমা ও বোয়াংছড়িতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১২ ডিসেম্বর থেকে শুধুমাত্র থানচি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু থানচি উপজেলায় আবারও ১১ থেকে ১৭ জানুয়ারি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। অক্টোবরের শুরুতে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল এবং এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, বান্দরবান সেনানিবাসের রিজিওন কমান্ডার, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বান্দরবান সেক্টরের বিজিবির সেক্টর কমান্ডার এবং সংশ্লিষ্টদের জানানো হচ্ছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। সর্বোচ্চ সতর্কতার অংশ হিসেবে সবাইকে জানানো হচ্ছে।
পাহাড়ে একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটছে। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বিদ্রোহীরা দেশের পার্বত্য অঞ্চলের একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযানে নিযুক্ত রয়েছে, গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। এর আগে র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরকিয়ার সদস্যরা বিদ্রোহী গ্রুপের সহায়তায় পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। র্যাব ও পুলিশ পার্বত্য এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সন্দেহভাজন ৫৫ জনকে আটক করেছে।
হোটেল ও মোটেল খালি পড়ে আছে। রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি সতরং চাকমা জানান, রাঙামাটি শহরে ৫৫টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। পাঁচ বছর আগেও রাঙামাটি ছিল পর্যটকে ভরপুর। পাহাড়ি পর্যটন খাতে বড় ধাক্কা দিয়েছে করোনা। এরপর থেকে এ খাতের আয় কমেছে। আগে সব হোটেল-মোটেল বুক করা ছিল। কিন্তু পর্যটক কমে যাওয়ায় হোটেল-মোটেলগুলো ফাঁকা। বিভিন্ন উপজেলায় রক্তপাতের ঘটনায় আবারো আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাঙামাটি আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, পাহাড়ে আগের তুলনায় পর্যটক কম। বান্দরবান-খাগড়াছড়িতেও প্রত্যাশিত পর্যটক নেই। এ খাতের আয়ও কমেছে। পাহাড়ের অস্থিরতা প্রশমিত হলে এবং পর্যটন খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হলে আবার সূর্য ফিরে আসতে পারে। বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গা জানান, সাত উপজেলার তিনটিতে বারবার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে সব উপজেলায়। রোয়াংছড়িতে আটজনের প্রাণহানির পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।