পাহাড়ে উৎসব।সুখ-শান্তি কামনায় নদীতে ভাসল ফুল
ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসবকে ঘিরে পাহাড়িরা আনন্দে নাচে। গতকাল বুধবার নদীতে ফুল ভাসিয়ে, পুরনো বছরের সব দুঃখ-বেদনা মুছে দিয়ে নতুন বছরের সুখ-শান্তি কামনা করে পালিত হয়েছে ফুল বিজুর প্রথম দিন।
গতকাল ভোরে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ঐতিহ্যবাহী পোশাকে কলা পাতায় বিভিন্ন বনজ ফুল সাজিয়ে পানিতে ভাসিয়ে দেয়। এছাড়া সকালে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, স্যাকারিন, বিহু উদযাপন কমিটির উদ্যোগে শহরের রাজবাড়ী ঘাটে নদীতে ফুল ভাসানো হয়। ফুল ভাসিয়ে অংশ নিতে আসা নারী-পুরুষেরা এই ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ঐক্য ও মৈত্রী বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে- এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। এতে উপস্থিত ছিলেন উদযাপন কমিটির আহবায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সদস্য সচিব ইন্তুমনি তালুকদারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে এবং পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে পাহাড়ি অঞ্চলে আমরা প্রথম দিনে বিজু উদযাপন করি। পুরাতন বছরের বিদায়ের সাথে সাথে আমরা কামনা করি যে আমাদের রোগ, ব্যাধি এবং দুঃখ দূর হয় এবং নতুন বছরটি সমৃদ্ধ হয়।
অপরদিকে, নগরীর গর্জনতলী এলাকায় কাপ্তাই লেকের পাশে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী গড়িয়া নৃত্য, বৈসুক নৃত্য, পিঠা ও পঞ্চন বিনোদনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার। উদযাপন কমিটির সভাপতি বিদ্যুৎ শংকর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা চেয়ারম্যান আংসুই প্রু চৌধুরী ও জেলা জেলা সদস্য বিপুল ত্রিপুরা।
দীপঙ্কর তালুকদার এমপি বলেন, আমরা বাংলাদেশে যেমন অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার বিকাশ চাই, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। আমরা সবাই বাংলাদেশকে ভালোবাসি।
আজ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে মূল বিজুতে থাকবে নানা সুস্বাদু খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ-ফুর্তির আয়োজন। শুক্রবার, উৎসবের তৃতীয় দিন, পাহাড়িরা সারাদিন বাড়িতে বিশ্রাম নেবে, বৌদ্ধ মন্দিরে প্রার্থনা করবে এবং প্রবীণদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাবে এবং সাবধানে ভাত খাইয়ে আশীর্বাদ নেবে। এ ছাড়া মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন শুক্রবার প্রথম দিনে বৌদ্ধ মন্দিরে প্রার্থনা, পিঠা তৈরি, ঘিলা খেলা, বুদ্ধ স্নান, হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, বয়স্কদের পূজা ও নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উৎসব. আগামী শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা মৈত্রী বৃষ্টির মধ্য দিয়ে পুরনো বছরের সব দুঃখ-কষ্ট ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে উৎসবে যোগ দেবে পাহাড়িরা।
এদিকে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সভাপতি প্রসিত খীসা ও সাধারণ সম্পাদক রবিশঙ্কর চাকমা ঐতিহ্যবাহী সামাজিক দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যত্র বসবাসকারী পাহাড়িদের বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু-বিশু-বিহু-চাংকরান শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের উৎসব।