রমজানে কোরআন পড়ুন, কোরআন বুঝুন
পবিত্র কুরআন একজন মুসলমানের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোরআনের কিছু অংশ ছাড়া নামাজ নেই। মানব জীবনের সম্পূর্ণ নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করা হয়েছে কোরআনে। আবার নামাজের বাইরে কোরআন তেলাওয়াতকে ইবাদতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। অর্থ না বুঝলেও প্রতি অক্ষরে দশটি নেক্কি পাওয়া যাবে।
অনারবদের জন্য, কোরানের অর্থ বোঝা কঠিন, তবে এটি পাঠযোগ্য। কোরানের অর্থ না বুঝলেও পরম প্রশান্তি পাওয়া যায়। কোরানের অস্বাভাবিক সুর অনারবদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এগুলো কুরআনের বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য।
রমজানকে বলা হয় কুরআনের মাস। রমজান মাসে কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ হয়। তাই রমজান এলে কুরআনের চর্চাকে ব্যাপকভাবে জোরদার করা স্বয়ং কুরআনেরই অধিকার। এই অধিকার রক্ষা করা সকল মুসলমানের দায়িত্ব। আর এই অধিকার সুরক্ষিত হবে কুরআন তিলাওয়াত, অর্থ অনুধাবন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
যারা কুরআন শিখে এবং শেখায় তারাই সর্বোত্তম গণ্য হয়। কোরআনের বিশেষ মর্যাদার কারণে এমনটি ঘটেছে। কুরআন নিজেই মর্যাদাপূর্ণ এবং এর তেলাওয়াতকারীকেও মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। আর যে মুসলমানরা অন্তত শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারে না তারা সবচেয়ে বড় বোকা বলে বিবেচিত হয়। তারা সরল সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়। পরকালে তাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ।
সূরা ফাতেহা সহ অন্তত চারটি ছোট সূরা মুখস্থ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। কারণ তা ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না। কেউ যদি এত বেশি কুরআন মুখস্থ করে থাকে কিন্তু তারতিল অনুযায়ী শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে না পারে এবং শুদ্ধভাবে তেলাওয়াতের চেষ্টাও না করে।
তারপরও তার নামায শুদ্ধ হবে না। আর ক্বিরাআত নাপাক হলেও কেউ যদি তা শুদ্ধ করার জন্য নিয়মিত চেষ্টা করতে থাকে তাহলে নামায শুদ্ধ হবে। আর চেষ্টা করা বন্ধ করলে নামায শুদ্ধ হবে না। (দুররুল মুখতার ২/৩৯৬, হিন্দিয়া ১/৭৯)
যারা ন্যূনতম কোরাতও মুখস্থ করেননি বা মুখস্থ থাকলেও পরিষ্কারভাবে পড়তে পারেন না তাদের জন্য এই রমজান মাসকে সঠিকভাবে শেখার জন্য ব্যবহার করা আবশ্যক। আর যারা নামাযের মত বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে তাদের জন্য যা করা উচিত তা হল সম্পূর্ণ কুরআন শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করা। কোরআনের অর্থ বোঝা কঠিন হলেও তারতিল অনুযায়ী কোরআন তেলাওয়াত করা খুবই সহজ। যা লাগে তা হল সামান্য পরিশ্রম। এই মহিমান্বিত রমজান হল কুরআন শেখার চেষ্টা করার সর্বোত্তম সময়।
রমজানে সকল নেক আমলের সত্তর গুণ বেশি প্রতিদান দেওয়া হয়। সে হিসেবে রমজান মাসে কুরআনের প্রতিটি অক্ষর তেলাওয়াতের বিনিময়ে সাতশত নেকী দেওয়া হবে।
হাদিসে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর তেলাওয়াত করবে তার একটি নেক আমল রয়েছে। আর প্রতিটি কল্যাণ দশগুণ। আমি বলি না যে আলিফ, লাম এবং মিম একসাথে একটি হাইফ। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর এবং মীম আরেকটি অক্ষর।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, আর আমি এই কোরআনে সব ধরনের উদাহরণ পেশ করেছি মানুষকে বোঝানোর জন্য।
আসুন কুরআনের মাসে কুরআনের উপর আলোকপাত করি। যদিও সারা বছর নিয়মিত কোরআনের চর্চা করতে হবে। তবে রমজান মাসে কুরআন চর্চাকে জোরালোভাবে উৎসাহিত করা হলে রমজানের পরেও তা অব্যাহত থাকবে।