উত্তরে নতুন আশা।পাইপলাইনে ডিজেল ও আদানির বিদ্যুৎ আমদানি

0

অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের অনগ্রসরতার অন্যতম কারণ শিল্পায়নের অভাব। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের অভাবে এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত কারখানা গড়ে ওঠেনি এবং কৃষিকাজও ব্যাহত হয়েছিল। ডিজেলের ঘাটতি এবং বিদ্যুতের লোডশেডিং বিশেষ করে সেচ মৌসুমে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করে। দূরত্বের কারণে চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্র ও রেলপথে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে তেল সরবরাহ করা কঠিন ও ব্যয়বহুল। বড়পুকুরিয়া ছাড়া বড় কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র না থাকায় দেশের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ এনে এ অঞ্চলের চাহিদা মেটানো হয়। দূর থেকে বিদ্যুৎ আসায় লো ভোল্টেজের সমস্যায় সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি সেচ মৌসুম থেকে এসব সমস্যা আর থাকবে না। কারণ, ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আসতে শুরু করেছে। সেচের পাশাপাশি সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রও চলবে এই ডিজেল দিয়ে। একই সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ আসছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় বিশেষ করে রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় জ্বালানি ও বিদ্যুতের ঘাটতি অনেকাংশে কমে যাবে। নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

গত শনিবার বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন ভারতের আসামের নুমালিগড় শোধনাগার থেকে ডিজেল নিয়ে আসে। এখন বছরে তিন লাখ টন ডিজেল পাইপলাইনে আসবে, যা ধীরে ধীরে বেড়ে হবে ১০ লাখ টনে।

বিপিসি কর্মকর্তারা জানান, আগে খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে রেলওয়াগনের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে তেল পৌঁছাতে ৬-৭ দিন সময় লাগত। ওয়াগনের স্বল্পতা, ধর্মঘটের কারণে প্রায়ই এই সরবরাহ ব্যাহত হয়। পাইপলাইনে ডিজেল আসায় সময় বাঁচবে। এছাড়া পরিবহন খরচও কমবে।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সফিকুল আলম বলেন, পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলে শিল্প বিপ্লব হবে। ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোক্তা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। অনেকেই পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলে প্রচুর সবজি হয়। পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও রেকর্ড পরিমাণে। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো এবং শ্রমিকের মজুরিও খুবই কম। নিরবচ্ছিন্ন তেল ও বিদ্যুৎ পেলে এখানে কৃষিভিত্তিক বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। উদ্যোক্তারা আগ্রহী হবেন। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

উত্তরাঞ্চলে ডিজেলের বার্ষিক চাহিদা ৫৮০ হাজার টন। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত কৃষি সেচ মৌসুমে ডিজেলের ব্যবহার বেড়ে যায়। সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম ও খুলনা থেকে তেল আনা হয় সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ডিপোতে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে রেলপথে তেল আসে। পাইপলাইনে তেল আসার কারণে তেল পরিবহনের এই ঝুঁকি কমে যাবে।

পার্বতীপুর ডিপোর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ লিটার ডিজেলের চাহিদা রয়েছে। বোরো মৌসুমে চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ লিটার বেড়ে যায়। রেল, সমুদ্র ও সড়কপথে দীর্ঘ সময় ধরে ডিজেল তোলার কারণে সেচ মৌসুমে ডিজেলের ঘাটতি দেখা দেয়। এই সময়ে চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পেট্রোল পাম্প প্রতিনিধিদের। পাইপলাইনে তেল আসছে বলে এখন এসব সমস্যা থাকবে না বলে জানিয়েছেন বিপিসি কর্মকর্তারা।

উত্তরের ১৬টি জেলায় সেচ ও গরমের সময় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৮৯৫ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক এবং ৪৪৪ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক। বাকিগুলো তেল ভিত্তিক। বর্তমানে এসব কেন্দ্র থেকে মাত্র এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, যার মধ্যে গ্যাস ও কয়লা থেকে আসছে ৭০০ মেগাওয়াট।

দাম বেশি হওয়ায় তেলভিত্তিক বিদ্যুত কম চালানো হয়। বাকি চাহিদা জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা হয়। দূর থেকে বিদ্যুৎ আনার কারণে উত্তরাঞ্চলে কম ভোল্টেজের সমস্যা প্রকট। আদানির বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে ৯ মার্চ থেকে। এখন প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। শীঘ্রই এটা হতে পারে i

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *