যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন।শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা, অস্বচ্ছ নির্বাচন এবং বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ
বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া নির্বাচনের স্বচ্ছতার অভাব এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের অবিশ্বাস রয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বলা হয়, সংবিধান নাগরিকদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সরকার নির্বাচনের সুযোগ দেয়। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো অবাধ বা স্বচ্ছ হয়নি। কারণ নির্বাচনে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সরকার আইনের অপব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করছে। বিএনপি অভিযোগ করে যে, গত বছর রাজনৈতিক বিক্ষোভ করার জন্য তাদের হাজার হাজার সদস্যকে পুলিশ ফৌজদারিভাবে অভিযুক্ত ও আটক করেছে। মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করেন, এসব অভিযোগের অনেকগুলোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রাজনৈতিক বন্দি বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক বন্দি রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টির অভিযোগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুই মামলায় স্থায়ী জামিন মঞ্জুর হয়েছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি ও আত্মসাৎ মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলাটি করা হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে, হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন যে শাস্তির জন্য মামলায় পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তারা। আদালতও খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
বাংলাদেশের সংবিধানে স্বচ্ছ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার কথা বলা হলেও দুর্নীতি ও পক্ষপাতের কারণে তা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। যে কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আদালতে যেতে পারে। তবে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের যথেষ্ট আস্থা না থাকায় অনেকেই অভিযোগ দায়ের করা থেকে বিরত থাকেন। নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকারের জন্য আদালত বা অন্যান্য ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত।
যদিও বিদ্যমান আইনগুলি সমাবেশের অধিকার প্রদান করে, সরকার সাধারণত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেয়। কোনো ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ বা সমাবেশ করতে চাইলে আগে থেকেই সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, কর্তৃপক্ষ বিরোধী দলকে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেয়। এবং প্রদত্ত শর্তগুলি অযৌক্তিক।
সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিধান থাকলেও সরকার প্রায়শই এই অধিকার সীমিত করে। বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ রয়েছে। নির্যাতনের ভয়ে গণমাধ্যমকর্মী, ব্লগাররা সরকারের সমালোচনা করলে সেল্ফ সেন্সর করে।
বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ই সকল ক্ষমতার উৎস। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনটিকে অবাধ ও স্বচ্ছ বলে মনে করেননি। বিরোধী দলের পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, ব্যালট লুটসহ নানা অনিয়মের কথা উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সরকার ও তার বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার হত্যা এবং অমানবিক নির্যাতন চালায়। কারাগারের অবস্থা কঠোর ও প্রাণঘাতী, বেআইনি আটক, ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় বেআইনি হস্তক্ষেপ, সংঘাত ও সংঘাতের হুমকি, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অপরাধীকরণ, ওয়েবসাইট ব্লক করা, গণতান্ত্রিক অধিকার ও শান্তিপূর্ণ মানবিক সম্পর্কের প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশে অবাধ বিচরণ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা, দুর্নীতি, নারীর প্রতি সহিংসতা, জবাবদিহিতা ও তদন্তের অভাব, আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হুমকি, সমকামীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হুমকি, শিশুশ্রম এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিবন্ধকতা উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাদেশে ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এক ধরনের অনাক্রম্যতা দেওয়া হয়। আর এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খুবই সীমিত পদক্ষেপ নেয়।
বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখনো গুম ও অপহরণ চলছে। এটি বন্ধ বা তদন্ত করার জন্য সামান্য সরকারি প্রচেষ্টা নেই। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে হুমকি ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।