ঢাকায় বিপুল সম্পদের গল্প ফাঁদছেন আরাভ
দিন যত যাচ্ছে, দুবাইয়ে রবিউল ইসলাম আরভ খানের সম্পদের নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। তিনি দুবাইয়ে যাদের সাথে দেখা করছেন তাদের কাছে তিনি দাবি করেছেন যে তিনি ঢাকার বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ভবনের মালিকের সাথে সম্পর্কিত। এমনকি আরভ কারওয়ান বাজারে একটি টেলিভিশন ভবনের আসল মালিক। তার এত সম্পদ যে সে টেলিভিশন থেকে বেশিদিন ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না।
দুবাইয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশ কয়েকজন সদস্য বলেন, আরভের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরপরই কেউ সম্পদ ও ক্ষমতার কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, তিনি যা চান; বাংলাদেশে এটি এক ঘণ্টায় কার্যকর করা সম্ভব। দামি ব্র্যান্ডের পোশাক পড়ে থাকায় প্রথমে তার কথা শুনে হতবাক হয়ে যান অনেকেই। এমনকি অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে – তিনি হঠাৎ কাউকে এটি দেখানোর জন্য ডেকেছিলেন।
দুবাইয়ে স্বর্ণের শোরুম উদ্বোধন করতে দেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কয়েকজন বাংলাদেশি শিল্পী আসায় পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরভ আলোচনায় আসেন। সে বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি। সেই মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিবি) ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। রবিউলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও অস্ত্র, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের ৯টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। , জালিয়াতি। তাকে দুবাই থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এদিকে হত্যা মামলার আসামি রবিউল দুবাই গিয়ে বড়লোক হয়েছে, তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মঞ্জুর রহমান বলেন, পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই ইন্টারপোলকে জানানো হয়েছে। তিনি যদি কোনো কারণে দুবাই ছেড়ে যান, তাহলে নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা সচেতন হবে।
বাংলাদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধি হিসেবে দুবাইয়ে কর্মরত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, অরভের সঙ্গে দেখা হলে তিনি প্রথমে নিজের ক্ষমতা প্রমাণের জন্য বিভিন্ন মহলের প্রভাবশালীদের গল্প বলতে থাকেন। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকের চাকরি খাওয়া তার ২-৩ মিনিটের ব্যাপার। কারণ তিনি অনেক মিডিয়া মালিকের ঘনিষ্ঠ। তবে, সম্প্রতি দুবাইতে বাংলাদেশি আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে মাত্র ১,০০০ দিরহাম অনুদানের পরে, আরভের কথিত অর্থ অনেকের মধ্যে একটি রহস্য তৈরি করেছে। দুবাইয়ে রাজনীতির সঙ্গে আছেন এমন অনেকের নাম ভাঙাতেন তিনি। দুবাই আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এরপর ফেসবুকে প্রচার করতেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আরভ বেশ কিছু অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সোনার বার চোরাচালান ছাড়াও তার একটি অনলাইন কেন্দ্রিক ব্যবসা রয়েছে। এমনকি দুবাইতে পার্টির আয়োজন করেও তিনি অর্থ উপার্জন করতেন। তদবিরের মাধ্যমে কাজ পাওয়ার কথা বলে কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। শোবিজ জগতের অনেকেরই ঘনিষ্ঠ আরাভ। রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজ আরভের আমন্ত্রণে দুবাই গেছেন।
আরেক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ হত্যার পর বাংলাদেশ থেকে পালানোর আগেও আরভ অনেককে প্রতারণা করেছে। তিনি দুই সহযোগী নিয়ে একবার পুলিশকে ফাঁকি দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও প্রতারণার একাধিক মামলাও বিচারাধীন রয়েছে। দুবাই নিজেই নিজেকে গোল্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা হিসেবে পরিচয় দেন।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্র বলছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অংশ হিসেবে আরভ ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এমন তথ্য তারা এখনও পাননি। তবে দেশে ঢুকলে হয়তো কোনোভাবে ঢুকেছেন। এখন পর্যন্ত তার নামে কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি।
গোয়েন্দা বিভাগের ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা মুলতুবি থাকা অবস্থায় আরভ বাংলাদেশে এসেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
সূত্র জানায়, মোটরসাইকেল চুরি, ক্যামেরা ছিনতাই, অস্ত্রের মুখে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল আরভ। তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা চুরির ঘটনাও রয়েছে।