নিজ ভিটায় বাড়ি পাচ্ছেন ৫ হাজার দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা,হস্তান্তর বুধবার
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক (৭২) প্রায় এক শতাব্দী আগে এক দুর্ঘটনায় পিঠের হাড় ভেঙ্গে অচল হয়ে পড়েন। এরপর থেকে স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অসহায়ের মতো সংসারের বোঝা টানছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসেবে প্রাপ্ত পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা। বাড়ি বানানোর কথা ভাবতেও পারেন না। এবার সামশুল হকের চোখ আনন্দে ঝলমল করে উঠল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বীর নিবাস’ প্রকল্পের আওতায় সামছুল হকের জন্য একটি একতলা বাড়ি নির্মাণ করেছে সরকার। শুধু সামছুল হক নয়, সারাদেশের পাঁচ হাজার দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা নিজ জমিতে একতলা বাড়ি তৈরি করেছেন। বুধবার পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার হাতে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করা হবে। সকাল ১০টায় গণভবন থেকে কার্যত এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মূল কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছর সামছুল হকের জমি বীর নিবাস প্রকল্পে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি বাড়ির চাবি পাওয়ার আশায় ছিলেন। সামছুল হক বলেন ২০০৬ সাল তুন আই ভাটা হাই। শেখ হাসিনা ভাতা বাড়িয়েছেন, আমি খুশি। থাউনের জন্য আর কোনো ঝামেলা নেই।’
এ প্রকল্প প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, দেশের জন্য যুদ্ধ করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই এখনো দরিদ্র। অনেকের ভালো থাকার ব্যবস্থা নেই। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ৫ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে তিনটি বেডরুম এবং একটি ড্রয়িং-ডাইনিং রুম রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সারাদেশের পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেবেন।
আ ক ম মোজাম্মেল হক আরও বলেন, “এর আগে আমরা দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করে দিয়েছি। সমস্যা হচ্ছে, বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাই বসতি ছেড়ে যেতে চান না। অনেকে বরাদ্দ পাওয়ার পর ফ্ল্যাট ভিন্নভাবে ব্যবহার করেন (ভাড়া বা বিক্রি)। কেন আমরা দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের নিজেদের বাড়িতে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এর আওতায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার ঘর নির্মাণ করা হবে।
বদলির জন্য ঢাকায় ৫৭, গাজীপুরে ৩৮, মানিকগঞ্জে ৫১, নরসিংদীতে ৩৯, নারায়ণগঞ্জে ৩২, মুন্সীগঞ্জে ৬, টাঙ্গাইলে ২০২, কিশোরগঞ্জে ১০৪, ফরিদপুরে ১২০, গোপালগঞ্জে ৫১, রাজপুরে ৫৮, রাজপুরে ৫৮ জন। মাদারীপুরে ৪৫, চট্টগ্রামে ৭৮, কক্সবাজারে ১৭, রাঙামাটিতে ৩, খাগড়াছড়িতে ৪৫, বান্দরবানে ৮, কুমিল্লায় ১৮৬, চাঁদপুরে ৮১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৩০, নোয়াখালীতে ৬৪, ফেনীতে ৮৬, লমীপুরে ৮৬ জন। বরিশালে ৬৭, ভোলায় ৯৮, পিরোজক্ষীপুরে ৮১, পটুয়াখালীতে ৪২, বরগুনায় ৩৯, ঝালকাঠিতে ৩০, খুলনায় ৮৮, বাগের সাথারায় ১০৭৫ জন। , যশোর ৭৫, মাগুরা ৩৫, ঝিনাইদহ ১৩৩, নড়াইল ৭৭, কুষ্টিয়া ১৭৯, চুয়াডাঙ্গা ৯১, মেহেরপুর ৪৬, রাজশাহী ৭২, নওগাঁ ৮০, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৪১, নাটোর ৪৩, বগুড়া ৬৯, জয়পুরগঞ্জ ৭৯, জয়পুরগঞ্জ ৭৯, গাঁজাগঞ্জ ৫, নগরী পঞ্চগড়ে ৩৮, ৫৯, নীলফামারীতে ২২, রংপুরে ৬৫, গাইবান্ধায় ৯৩, লালমনিরহাটে ৩৬, কুড়িগ্রামে ৪১, ময়মনসিংহে ১৯১, নেত্রকোনায় ১২৬, জামালপুরে ৯৮, শেরপুরে ১০৬, শেরপুরে ৫৯, মৌলভীবাজারে ৫৯ জন। হবিগঞ্জে ৫০ ও সুনামগঞ্জে ১৪৮ জন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতা বার্ষিকী উপলক্ষে সরকার ২০২১ সালে সারাদেশে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণের কাজ শুরু করে। প্রকল্পের মেয়াদ ৩১ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত। এই পর্যায়ে পাঁচ হাজার বাড়ি নির্মাণের পর হস্তান্তর করা হচ্ছে। বাড়িতে দুটি বেডরুম, একটি ড্রয়িং রুম এবং একটি ডাইনিং রুম, দুটি বাথরুম এবং একটি বারান্দা রয়েছে। ৪ শতাংশ জমিতে ৭৩২ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি বাড়ির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা।