আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ।নেতাকর্মীদের নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকার নির্দেশ
বিএনপির তৃণমূলের পদযাত্রার দিন গতকাল দেশের সাড়ে চার হাজারের বেশি ইউনিয়নে শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। এসব সমাবেশ থেকে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। একইসঙ্গে ঐক্য বজায় রেখে জনগণের জানমাল রক্ষায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৫৩ জন নেতাকে ৪০টি জেলার ইউনিয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাকি ২৪ জেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলার নেতারা এ দায়িত্ব পান।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে ভেঙে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। দলের অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা বলছেন, তারা অন্য দলেও যেতে পারেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতি করছে। আমরা তাদের প্রতিহত করছি না। জনগণের জানমাল রক্ষায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে সচেতন ও সক্রিয় করা হচ্ছে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতার কর্তব্য। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন মানিকের সভাপতিত্বে সমাবেশে স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শান্তি সমাবেশে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি আন্দোলন নয়, শুধু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। তবে কর্মসূচির নামে কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। দল ক্ষমতায় আসার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা শিথিলতা রয়েছে, দ্রুত তা ঝেড়ে ফেলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এ কারণে বিএনপি অতীতের মতো নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মী প্রাণ হাতে নিয়ে রাজপথে নেমেছে, ক্ষমতা পেতে বা থাকার জন্য নয়, জনগণের জন্য। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক আর নাই থাকুক, রাজপথ পাহারা দিতে হবে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ শামীম। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান প্রমুখ।
মেহেরপুর শহরের শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে এক সমাবেশে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, বিএনপি অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার জন্য বিদেশি প্রভুদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজপথ গরম করার চেষ্টা করছে। তাদের ইচ্ছা কখনোই পূরণ হবে না।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বানেশ্বর বাজারে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন কখনো সফল হবে না। সমাবেশের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে পিকনিক করছে তারা। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি যতদিন আন্দোলন করবে ততদিন প্রতিটি নেতাকর্মীকে রাজপথে থাকতে হবে। তাদের মাঠ থেকে ঠেকাতে হবে। শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম।
মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম বলেন, বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসংযোগের রাজা। তাদের থেকে সাবধান থাকুন। অসৎ উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য তারা আবারো দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে শান্তি সমাবেশে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় ভোট চান। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পৌর মেয়র জিএম মীর হোসেন মেরু। অপরদিকে মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর।
বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য বন্ধে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। শান্তি সমাবেশ শেষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ড. শাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় মিছিল বের হয়। পাবনার ঈশ্বরদীতে শান্তি সমাবেশে স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, শুধু ঢাকা বা বিভাগীয় শহর নয়, ঈশ্বরদীতেও এ খেলা শুরু হয়েছে। এখন সময় বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতাচ্যুত করার।
এছাড়া ঢাকার দোহার, নাটোর, বগুড়া, ঝালকাঠি, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, ভোলা, শেরপুর, ঠাকুরগাঁও, খুলনা, মাগুরা, বরিশাল, নীলফামারী, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থানীয় নেতারা শান্তি সমাবেশ করেন।
এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নে শান্তি সমাবেশকে ঘিরে জেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয় অন্তত ছয়টি মোটরসাইকেল।
ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা হয়।