নাগালের বাইরে ‘সস্তা’ ডাল
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফারুক হোসেনের খাবার হোটেলের ব্যবসা। ১৫ বছর ধরে, এই ছোট ব্যবসার আয় দ্বারা তার পরিবার চলে। এমনকি এক বছর আগেও তিনি ভাতের সঙ্গে গ্রাহকদের বিনামূল্যে সরু মসুর ডাল দিতেন। এখন প্রতি বাটি ডাল ১০ টাকায় বিক্রি করছেন। কারণ, এক বছর আগে সব ধরনের ডালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা হলেও এখন তা ৭৫ থেকে ১৪০ টাকায় পৌঁছেছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি মসুর ডাল ১৪০, ভারতীয় মসুর ডাল ১২৫, মুগ ডাল ১৩০, খেসারি ডাল ৯০ ও বুটের ডাল ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। রমজানকে ঘিরে দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। সেক্ষেত্রে ইফতার পণ্যের অন্যতম এই উপাদানটির উচ্চমূল্য ভোক্তাদের ওপর আরও প্রভাব ফেলবে।
বিশ্ব ডাল দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এক সেমিনারে জানানো হয়, দেশে বছরে ২৬ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে এক লাখ টন ডাল উৎপাদন হয়। আমদানি করতে হয়েছে ১৪ লাখ টন। এতে বছরে ব্যয় হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা। তানজানিয়া, মোজাম্বিক, মায়ানমার থেকে মুগ ডাল আমদানি করা হয়। প্রতি বছর রোজা এলেই বিশ্ববাজারে ছোলার দাম বেড়ে যায়। এ উপলক্ষে মিয়ানমার ও অস্ট্রেলিয়াও ছোলার দাম বাড়িয়েছে। অন্যদিকে মসুর ডালের চাহিদা মেটাতে নেপাল, চীন, কানাডা, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশের দিকে তাকাতে হচ্ছে।
ডালের দাম ভোক্তাদের সাধ্যের মধ্যে রাখতে দেশে উৎপাদন বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) আয়োজিত গতকালের সেমিনারে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, ধান, ডালসহ অন্যান্য ফসলকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। তবে আমরা ধানের উৎপাদন না কমিয়ে ডালের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি। বছরে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন ডাল উৎপাদনের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল, তৃণভূমি, পাহাড়ি এলাকা, উপকূল, রেললাইন ও রাস্তার পাশে এবং বসতবাড়িতে ডাল ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ফলের বাগানেও মিশ্র ফসল হিসেবে ডাল চাষ করা যায়।
বারি ডাল গবেষণা কেন্দ্রের মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৪৫ গ্রাম ডাল খাওয়া উচিত। দেশে মাথাপিছু ডালের প্রাপ্যতা ২৮ গ্রাম হলেও মানুষ খাচ্ছে ১৭ গ্রাম।
বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার বলেন, অনেক আধুনিক উচ্চ ফলনশীল ডালের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব জাত চাষ করা হলে প্রতি হেক্টরে ফলন আড়াই টনে উন্নীত করা সম্ভব।
এদিকে ডাল উৎপাদন নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে বড় অমিল রয়েছে। ফলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়নে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ৩১ হাজার টন ডাল উৎপাদিত হয়েছে। আর পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, একই অর্থবছরে ৩ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ২৪ হাজার টন ডাল উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদন দেখায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সঠিক তথ্য ছাড়া পরিকল্পনা করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।