পোশাক ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন

0

কারখানা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে যাওয়ার পথে কাভার্ড ভ্যান থেকে পোশাক চুরির ঘটনা বাড়ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে একটি চক্র কাভার্ড ভ্যান ইট ভাটায় বা গাড়ির গ্যারেজে কাপড় রাখার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। মাটি বা বালির সমান ওজন দিয়ে শক্ত কাগজ থেকে কাপড় সরিয়ে ওজন বজায় রাখা হয়। এভাবেই বন্দর ডিপোতে পাঠানো হয়। এ ধরনের কার্টন সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার দেড় থেকে দুই মাস পর গ্রাহকের কাছে পৌঁছালে তা সরবরাহকারী উদ্যোক্তার জন্য বড় বিব্রতকর।

গত মাসে, ব্রাজিলের একজন ক্রেতা ভিডিওর মাধ্যমে তাদের পোশাক কারখানাকে বলেছিলেন যে ক্রেতার কাছে আসা সমস্ত কার্টনের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অনুপস্থিত। কিছু কার্টন সম্পূর্ণ খালি পাওয়া গেছে। ওই চালানে ২৬,০০০ পিস পোশাক যাওয়ার কথা ছিল। এ ধরনের ঘটনায় একদিকে যেমন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে পোশাক শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকদেরও হারাবেন। অপকর্ম বন্ধ না হলে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এ ধরনের নৈরাজ্যকর ঘটনা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। আগামী মাসের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ করাসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সংগঠনের আরেকটি দাবি স্টকলট হিসেবে চোরাই পণ্য রপ্তানি বন্ধ করতে স্টকলটের উৎস নিশ্চিত করা। মহাসড়কে চুরি বন্ধে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও। যাচাইকরণ ইত্যাদির অনুমতি দেওয়ার জন্য কাভার্ড ভ্যানের মালিক, চালক এবং শ্রমিকদের একটি ডাটাবেস তৈরি করা।

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান এসব কথা বলেন। চুরির বিভিন্ন ঘটনা এবং কিভাবে এসব ঘটনা ঘটছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন তিনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গত দেড় বছরে কাভার্ড ভ্যান চুরির দুই হাজারের বেশি ঘটনা ঘটেছে। চুরি হয়েছে বিপুল পরিমাণ পোশাক। শুধুমাত্র ২০২২ সালে এই ধরনের ২২টি ঘটনা ঘটেছে।

কীভাবে চুরি হয় তার বর্ণনা দিয়ে ফারুক হাসান বলেন, মহাসড়কে কাপড় বহনকারী কাভার্ড ভ্যানের চালকের সহযোগিতায় কাভার্ড ভ্যান মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ইটভাটা, গাড়ির গ্যারেজ বা বিভিন্ন গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কাভার্ড ভ্যানের পেছনের তালা ঠিক রেখে কব্জাগুলো খুলে কার্টন থেকে পছন্দমতো পণ্য বের করা হয়। সেখানে আবার কার্টনে মাটি বা অন্যান্য পণ্য ভর্তি করে ওজন ঠিক রেখে চট্টগ্রাম বন্দর ডিপোতে পাঠানো হয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব চোরাই পণ্য স্টকলট হিসেবে বিদেশে রপ্তানি করে। কিছু স্থানীয় বাজারে ছাড়া হয়।

বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন বিজিএমইএ সভাপতি। কারণ, দেশের অন্যান্য চুরির তুলনায় রপ্তানিমুখী পোশাক চুরি বেশি নেতিবাচক। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, যা অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দেবে।

পোশাক খাতের অন্যান্য সমস্যা নিয়েও কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি। বিভিন্ন খাতে উৎপাদন খরচের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে পোশাক শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ক্রমাগত কমে যাবে। কারণ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পোশাক শিল্পের ব্যয় বৃদ্ধির বোঝা বহন করার ক্ষমতা নেই। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হলে তা সহনীয় হারে ও পর্যায়ক্রমে বাড়াতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *