তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ, অধরা জড়িতরা

0

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাইক্লোন প্রিপারনেস প্রোগ্রামে (সিপিপি) শতাধিক পদে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রায় এক বছর প্রতিবেদন পেশ করার পর অবশেষে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে মন্ত্রণালয়। তবে তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবং তারা এই সুযোগের সাথে যোগাযোগের বাইরে থাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে নির্বাচিত, যোগ্য প্রার্থীদের নম্বর কমানো, উত্তরপত্র পরিবর্তন, পছন্দের প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর বাড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। লিখিত পরীক্ষার খাতায় মার্ক কারচুপির প্রমাণও রয়েছে।

সিপিপির ১০৮ টি পদের জন্য ১৬ জুন ২০২০-এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ২৮ আগস্ট ২০২১ তারিখে লিখিত পরীক্ষার পরে, ফলাফল ৩০ আগস্ট প্রকাশিত হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার পর ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ সেপ্টেম্বর ফলাফল স্থগিত করা হয়। এরপর গত অক্টোবরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে তদন্তের দায়িত্ব দেন ১৩ মাস আগে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিবের কাছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার অন্তত এক বছর পর চলতি জানুয়ারিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে মন্ত্রণালয়। তবে নিয়োগ অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবাই আড়াল থেকে যাচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিপিপির নিয়োগ কেলেঙ্কারির সঙ্গে বেশ কয়েকজন জড়িত। এতে প্রধান ভূমিকা পালনকারী দুই ব্যক্তি হলেন- সিপিপির প্রধান কর্মকর্তা আহমদুল হক ও তৎকালীন সচিব মোঃ মহসিন। এ কারণে সে সময় তদন্ত প্রতিবেদন পেলেও ব্যবস্থা নেননি সচিব। মহসিন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। আর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম প্রমাণিত হলেও আহমদুল হক সুস্থ আছেন। আহমদুল হকের অসহযোগিতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

এই প্রেক্ষাপটে কি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে আহমদুল হক বলেন, ‘এটা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার।’ নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত হয়েছে, মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’ তদন্তে আপনার অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কী বলবেন? জবাবে আহমদুল বলেন, ‘তদন্তে কী আছে আমি জানি না, মন্ত্রণালয় জানে, তাদের জিজ্ঞাসা করুন।’

দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান কোনো উদ্যোগের কথা জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি, আরও কিছু বিষয় আছে, সেগুলো বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান বলেন, এই নিয়োগ বাতিলের সময় দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি দেখছি।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ১৮টি ক্যাটাগরিতে ১০৮টি শূন্য পদের মধ্যে সাত ধরনের পদে ৩৬ জন প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের নম্বর বাড়িয়ে চূড়ান্ত নির্বাচন করা হয়। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, উত্তরপত্র পরিবর্তন করে জুনিয়র সহকারী পরিচালক পদে দুই প্রার্থীর নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে। একই পদের তিনজনের প্রাপ্ত নম্বর কেটে বাড়ানো হয়েছে। একজন সহকারী কাম রেডিও অপারেটর পদে অস্পষ্টতা সৃষ্টি করে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয়েছে।

রেডিও ওয়ার্কশপ সহকারীর তিনটি শূন্য পদের জন্য ছয়জন আবেদন করেছেন। পরীক্ষায় অংশ নেন তিনজন। ৭০ নম্বরের মধ্যে, তিনজন পরীক্ষার্থীর একজন ১৮, বাকি দুজন ১৬ এবং ১৫.৫ নম্বর পেয়েছে। অর্থাৎ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের পাশ দেখানোর পর নির্বাচন করা হয়।

সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি হয়েছে স্পিডবোট চালক নিয়োগে। পদটিতে শেষ পর্যন্ত উত্তীর্ণ প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেননি। তা সত্ত্বেও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অবশেষে তাকে নির্বাচিত করা হয় এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। তদন্ত কমিটি বলছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনো এক পর্যায়ে এই অনিয়ম ধরা পড়া উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি। ১১টি শূন্য পদের বিপরীতে মাত্র ১৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, রেডিও ওয়ার্কশপ ও স্পিডবোট চালক পদে পর্যাপ্ত প্রতিযোগী নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *