গরিবের স্বল্পমূল্যে চাল কেনার সুযোগ বাড়ছে

0

দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের বাজার। সার ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশে মোটা চাল ৫৫ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। চালের বাজারের গরম থেকে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে মুক্তি দিতে কম দামে চালের সরবরাহ বাড়াচ্ছে সরকার। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এক কোটি কার্ডধারীকে মাসে অন্তত একবার ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খোলা বাজার বিক্রয় (ওএমএস) কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে। ওএমএস আউটলেটের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এছাড়া চাল আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন গতকাল বলেন, সরকার টিসিবির পারিবারিক কার্ড পণ্যে চাল যোগ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। শিগগিরই এই কর্মসূচি চালু করা হবে। টিসিবি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় এর পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। কারণ টিসিবি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ডিলার ভিন্ন। এ ছাড়া কী দামে এই চাল দেওয়া হবে, কতবার দেওয়া হবে- সেগুলোও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খাদ্য সচিব আরও বলেন যে ওএমএস প্রোগ্রামটি দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের লোকদের সহায়তা করার জন্য বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে আট শতাধিক পয়েন্ট থেকে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন সারাদেশে ২ হাজার ১৩টি পয়েন্ট থেকে চাল ও আটা সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

করোনা মহামারির পর থেকে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বাড়তে থাকে চালের দাম। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গত বোরো মৌসুমের বন্যা। বন্যার কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। চলতি আমন মৌসুমে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পর্যাপ্ত ধান আবাদ হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় গত ৫ আগস্ট ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর চালের দাম বেড়েছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ দিনে মোটা চালের দাম কেজিতে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর বাজারে স্বর্ণা, চায়নার মতো মোটা চালের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র ও স্থায়ী আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় তাদের সহায়তা বাড়ানোর জন্য সরকারকে সুপারিশ করে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। ফলে দরিদ্র, নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ কম খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় সরকারের এ উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগী।

বর্তমানে টিসিবি পরিবারের কার্ডধারীদের কাছে দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি ডাল ও চিনি বাজারের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রি করছে। শহর পর্যায়েও ৫ কেজি পেঁয়াজ দেওয়া হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ইতিমধ্যে বলেছেন, টিসিবি প্রতি মাসে অন্তত একবার প্রতিটি কার্ডধারীকে এসব পণ্য দেবে। এর সঙ্গে ১০ কেজি চাল দেওয়া হবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এ চালের দাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সূত্র জানায়, চালের দাম প্রতি কেজি ১৫ টাকা রাখার চিন্তাভাবনা চলছে।

বর্তমানে সারাদেশে ওএমএস চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০৪ পয়েন্টে। আগামী মাস থেকে ওএমএস বিক্রি হবে ২ হাজার ১৩ পয়েন্টে। এতে ৪ লাখ ৪ হাজার ৪৪৪ জন ক্রেতা চাল কিনতে পারবেন। বর্তমানে একজন ক্রেতা একবারে ৫ কেজি চাল বা আটা কিনতে পারেন। চাল ৩০ টাকা ও আটা ১৮ টাকা কেজি দরে। বাজারে আমন মৌসুমের চাল না আসা পর্যন্ত ওএমএসের এ কার্যক্রম চলবে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ অন্তত ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ওএমএসে বিক্রি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কারণ এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা টিসিবি কার্ড পাননি। কিন্তু তারাও সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য খুঁজছেন। সুবিধা পাবে এই শ্রেণির মানুষ।

খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, টিসিবি পরিবার কার্ড ও ওএমএসে চাল দেওয়ার কারণে সরকারের চাল সংগ্রহ বাড়ানো উচিত। দেশের ভেতর থেকে অতিরিক্ত আদায় না করে আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সরকার ও এম এসের ভিত্তিতে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং ভারত থেকে চাল সংগ্রহের কথা ভাবছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ভিয়েতনামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এ বিষয়ে খাদ্য সচিব বলেন, চাল সংগ্রহে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চাল ক্রয়ের এমওইউ রয়েছে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দেশে প্রায় ১৯ লাখ টন ধান, চাল ও গম মজুদ রয়েছে। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমও মনে করেন, সরকার দেশের বাইরে থেকে সংগ্রহ করলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দামের ওপর প্রভাব পড়বে।

আমদানি শুল্ক কমানোর উদ্যোগ  এদিকে সরকারও চাল আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *