চট্টগ্রাম বন্দর।ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ৯ চালান খালাস

0

চট্টগ্রাম বন্দরে জাল কাগজপত্র দাখিল করে ৯টি পণ্যের চালান খালাস করেছে প্রতারক চক্র। এক কোম্পানির নাম ঠিকানায় অন্য কোম্পানির পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বন্দর থেকে আমদানিকৃত পণ্য খালাসের জন্য বদলি হওয়া দুই রাজস্ব কর্মকর্তার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এনবিআরের সফটওয়্যার সিস্টেমে প্রবেশ করে প্রতারণা করা হয়। জাল রিলিজ ডকুমেন্ট তৈরি করে অন্য কাস্টমস অফিসারের জাল স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়। জালিয়াতির এই ধাপগুলি শেষ করার পরে, চালান খারিজ করা হয়। গত বছরের ৭ নভেম্বর ১১টি চালান জালিয়াতি ধরা পড়ে। এর মধ্যে দুটি চালান জব্দ করা হয়েছে।

এসব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক হাফিজুর রহমান হ্যাপি ও এই প্রতিষ্ঠানের কাস্টম সরকার জাহেদ উদ্দিন সাজু। ১১টি জালিয়াতির মামলায় সাজুকে কারাগারে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। শুভ পলাতক। সাজু জালিয়াতির ঘটনায় ২০২১ সালের ২৩শে মার্চ বদলি হওয়া রাজস্ব কর্মকর্তা আমির হোসেন সরকার ও রাজস্ব কর্মকর্তা জয়নব বেগমের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়। তবে বদলি হওয়ার পর কোড ও পাসওয়ার্ড নিষ্ক্রিয় না করায় আমির ও জয়নাবকে সাসপেন্ড করা হয়। কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ তফশির উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

মহানগরের অতিরিক্ত পিপি আবিদ হোসেন জানান, সাজু ১০টি জালিয়াতির মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। ১০ আগস্ট জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। ঘোষণাপত্র ও শুল্ক তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাজু ও হ্যাপি ব্যাপক জালিয়াতি করেছেন। তবে সাজুর আইনজীবী সানাউল্লাহ কায়সার সোহেল জানান, এ ঘটনায় সাজুকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি এর সাথে জড়িত নন। অভিযুক্ত হ্যাপি জানান, তার কোম্পানিতে কর্মরত সাজু প্রথমে তার স্বাক্ষর জাল করে। এরপর রাজস্ব কর্মকর্তাদের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে জালিয়াতি করেন। হ্যাপির দাবি, তিনি প্রতারণার সঙ্গে জড়িত নন। প্রায় দুই বছর ঢাকায় থাকেন। সাজু চট্টগ্রামে তার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিল সাজু।

সাজু ২০২০ সালে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ার বলিরহাট এলাকায় কাস্টম সরকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। দুই বছর বন্দরে কাজ করে সে ফাঁকিগুলো শিখে প্রতারণাতে পারদর্শী হয়ে ওঠে। কাস্টমসের তদন্ত কমিটি সাজু ও হ্যাপির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করার সুপারিশ করেছে।

যারা পণ্য আমদানিকারক কোম্পানির নাম জানেন না: সাভারের মেসার্স টাইগারকো লিমিটেড ১১ বছর ধরে আমদানি-রপ্তানি করে আসছে। ৪ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে, TigerCo-এর বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কাছে একটি কল এসেছিল। সাভারের মা সেলাই কোম্পানির এমডি মিজানুর রহমান নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমার (মিজানুর রহমান) মালিকানাধীন টাইগারকো কোম্পানির নামে বন্দরে পণ্যের একটি চালান খালাস করা হয়েছে। টাইগারকোর আধিকারিকরা এটা শুনে হতবাক। মা স্টিচ লিমিটেড জালিয়াতি করে টাইগারকোর নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে পণ্য আমদানি করেছে। টাইগারকো, এমজিএল কোম্পানি বিডি লিমিটেড, হেলিকন লিমিটেড, ব্রাদার্স প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং গোল্ড সাইন ইন্ডাস্ট্রিজের মতো আমদানিকারকরা আলাদাভাবে কাস্টমস তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, তাদের নাম ব্যবহার করে অন্য কোম্পানির পণ্য আমদানি করা হয়েছে। সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনালের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক ছিল না।

পাঁচটি কোম্পানির প্রতি সন্দেহ: কাস্টমস তদন্ত প্রতিবেদনে অন্যান্য কোম্পানির নাম ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দরে ইলেকট্রো প্যাক, মেসার্স হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স, এআরএইচ নিট কম্পোজিট লিমিটেড, মদিনা করপোরেশন এবং মা স্টিচের নাম উঠে আসে। কাস্টমসের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি পাঁচটি কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা চাইলেও ইলেকট্রো প্যাক ছাড়া কোনো কোম্পানি কমিটির কাছে কোনো তথ্য বা প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এমনকি কমিটির শুনানিতেও কেউ হাজির হননি। এই পাঁচটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *