ঈদযাত্রা: প্রত্যাশার চাপ নিতে পারছে না রেলওয়ে
করোনার কারণে টানা দুই বছর ঈদ আনন্দকে ‘বিসর্জন’ দিতে হয়েছে। এখন প্রাণঘাতী ভাইরাসের ভয়াবহতা অনেকটাই কমে এসেছে। তাই এই ঈদকে সামনে রেখে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বাড়তি আনন্দ ও উত্তেজনা। এবারও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশে ফিরবেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। তবে স্বস্তিতে বাড়ি ফেরা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাস্তার ঝামেলা এড়াতে অনেক বাড়িগামী মানুষের প্রথম পছন্দ ট্রেন। নিরাপদ এবং আরামদায়ক হওয়ায় পছন্দের ট্রেনটি মানুষের উচ্চ প্রত্যাশা দ্বারা বেষ্টিত। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না রেলওয়ে। আবারও যাত্রীর চাপ নিতে পারবে কিনা সন্দেহ।
বছরের পর বছর একই বৃত্তে ঘুরছে রেলওয়ের ‘ঈদসেবা’। প্রতি বছর ঈদ-উল-ফিতরের সময় কিছু পুরনো বগি মেরামত করে নিয়মিত ট্রেনে যোগ করা হয়, নিয়মিত ট্রেনের ‘সাপ্তাহিক ছুটি’ বাতিল করা হয় এবং কিছু বিশেষ ট্রেন চালু করা হয় না। বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে ঈদের রেলের বিশেষ প্রস্তুতি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফলে যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণে রেলের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রেলওয়েও তাদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করছে। তবে কয়েক বছরের মধ্যে রেলওয়ের সক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পর্যাপ্ত লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ও কোচের (বগি) অভাবে দৃশ্যমান জনবল সংকটের কারণে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছে। রেলওয়ের বহরে এসব লোকোমোটিভ যুক্ত হওয়ায় বিদ্যমান লোকোমোটিভ সংকট কিছুটা লাঘব হলেও লোকোমাস্টার ও কোচ সংকটের কারণে লোকোমোটিভ থেকে বাড়তি কোনো সুবিধা হচ্ছে না। এ ছাড়া ফিল্ড মাস্টার, সহকারী মাস্টার ও টিটিসহ ট্রেন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবলের অভাব রয়েছে। ফলে ঈদে আগের চেয়ে বেশি কিছু করতে পারছে না রেলওয়ে। তবে রেলওয়ে বলছে তারা অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি যাত্রী বহনের জন্য প্রস্তুত।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিরাপদ, আরামদায়ক এবং তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হওয়ায় মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করতে চায়। ফলে ট্রেনে সবসময় যাত্রীর চাপ থাকে। তবে ঈদের সময় চাপ অনেক গুণ বেড়ে যায়। তার ওপর করোনার কারণে দুই বছর মানুষ সেভাবে ঈদ উপভোগ করতে পারেনি। সাধারণত, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার ট্রেনে চাপ বেশি থাকবে। কীভাবে এটি পরিচালনা করা যায় তা নিয়েও আমরা অনেক চাপের মধ্যে আছি। তবে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।
রেলওয়ে পশ্চিমের অতিরিক্ত চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কারণে ট্রেনে যাত্রীদের চাহিদা ও চাপ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এবারের ঈদে তা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তবে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে রেলের চাপ সহ্য করার ক্ষমতাও বাড়বে।
বরাবরের মতোই পুরনো লক্কড়ঝক্কড় কোচগুলো নিয়মিত চালানোর উপযোগী করে মেরামত করা হচ্ছে। রেলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এবার মোট ৯২টি পুরনো কোচ মেরামত করা হচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে ৭২টি কোচ মেরামতের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি ১৯টি বগি সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে মেরামত করা হবে। তবে পুরনো কোচ মেরামত নিয়ে দ্বিধা রয়েছে শুভঙ্করের। এছাড়া এবারের ঈদে ২১৮টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে রেলওয়ের পূর্ব অংশে ১১৬টি এবং পশ্চিম অংশে ১০২টি ব্যবহার করা হবে।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে ওয়ার্কশপের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কারখানাটি সাধারণত প্রতি মাসে গড়ে ৩৫টি পুরনো কোচ মেরামত করে। তবে চলতি মাসে ৩৫টি নিয়মিত কোচের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫টি পুরনো কোচ মেরামত করা হচ্ছে। ফলে কত পুরনো কোচ মেরামত করা হবে তা আদায় করা যাচ্ছে না। জনবল সংকটের কারণে অতিরিক্ত ১৫টি কোচ মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছেন কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।